আগামী ১ জুলাই থেকে ওই তিন আইন কার্যকর হওয়ার কথা। তার আগে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘‘গত ডিসেম্বরে সংসদের দুই কক্ষের ১৪৬ জন সাংসদকে বহিষ্কারের পর যে স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে ওই তিনটি বিল পাশ করানো হয়েছিল, তা ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কালো দাগ। এখন তা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন।’’
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘নৈতিকতা এবং বাস্তবতা’ যাচাই করে পুরো প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করা হোক। ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি লিখেছেন, বিদায়ী লোকসভায় যে ভাবে কোনও আলোচনা ছাড়াই দ্রুত বিল তিনটি পাশ করানো হয়েছিল, তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং মূল্যবোধের পরিপন্থী। তিনি লিখেছেন, ‘‘নৈতিকতার দিক থেকে আমি মনে করি, সংসদীয় ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার কথা ভেবে নবনির্বাচিত লোকসভার সদস্যদের তাঁদের আমলে কার্যকর হওয়া আইন নিয়ে বিতর্কে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।’’
গত বছরের গোড়ায় মোদী সরকার দণ্ড সংহিতা আইনের খসড়া প্রকাশ্যে আনার পরেই মমতা তার বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রের প্রচেষ্টার মধ্যে চুপিসারে অত্যন্ত কড়া এবং কঠোর নাগরিক বিরোধী বিধি প্রবর্তনের একটি গুরুতর প্রচেষ্টা রয়েছে।’’ তিনি বলেছিলেন, ‘‘আগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ছিল। তা প্রত্যাহারের নাম করে, তারা (কেন্দ্রীয় সরকার) প্রস্তাবিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় আরও কঠোর এবং স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে, যা নাগরিকদের আরও মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।’’ বৃহস্পতিবারের চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘‘দেশের নাগরিকদের অনেকের মনেই এই আইন নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’
বাস্তবতার নিরিখেও নয়া তিন ফৌজদারি বিল নিয়ে আপত্তির সঙ্গত কারণ রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। যে ভাবে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের মতামত উপেক্ষা করে একতরফা ভাবে বিলের খসড়া তৈরি করে তা সংসদে পাশ করানো হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তাঁর আরও অভিযোগ, কেন্দ্রীয় আইন এবং বিচার মন্ত্রক নতুন আইন কার্যকর করার জন্য গত ১৬ জুন কলকাতায় যে কর্মশালার আয়োজন করেছিল, তা নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে!
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ অগস্ট সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করে জানিয়েছিলেন, ১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ দিয়ে। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিয়োর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি দণ্ডবিধি) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ দ্বারা এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য বিল’-এ। তার পরেই বিল তিনটি সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এর পরে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে শতাধিক বিরোধী সাংসদকে বহিষ্কার করে প্রায় বিরোধীশূন্য সংসদের দুই কক্ষে কোনও আলোচনা ছাড়াই ধ্বনিভোটে মোদী সরকার পাশ করিয়ে নেয় তিনটি বিল। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাতে অনুমোদন দিয়ে সই করেন। এর পর সেই তিন আইন— ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম ১ জুলাই থেকে কার্যকরের সরকারি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়।