স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্য সম্পাদক হিসাবে মহম্মদ সেলিমের প্রার্থী হওয়া নিয়ে রাজ্য কমিটির বৈঠকেও দ্বিধাবিভক্ত সিপিএম। লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের পর্যালোচনা করতে বুধবার আলিমুদ্দিনে শুরু হওয়া সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষ হয় বৃহস্পতিবার। দুদিনই সেলিমের প্রার্থী হওয়া কতটা সঙ্গত ছিল তা নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে সওয়াল করেন দুই নেতা।
বৈঠকের প্রথমদিন সেলিমের (Md Salim) ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কৃষকসভার শীর্ষনেতা অমল হালদার। সূত্রের খবর, এদিন এই ইস্যুতে সেলিমের পাশে দাঁড়ান এবার লোকসভা ভোটে রানাঘাটের (Ranaghat) সিপিএম প্রার্থী অলোকেশ দাস। অলোকেশ বলেন, সেলিম প্রার্থী না হলে প্রচার এই জায়গায় যেত না। মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) আর কেউ এত ভোট পেতেন না। সেখানে সিপিএম দ্বিতীয় হয়েছে। আরেক প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সেলিমের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে খবর।
উল্লেখ্য, পার্টির রাজ্য সম্পাদক হিসাবে বাংলায় ভোটে দাঁড়ানোর নজির সেলিমের আগে একমাত্র সূর্যকান্ত মিশ্রর (Surjya Kanta Mishra) ছিল। এদিকে, বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে। বুধবারই রাজ্য সম্পাদক স্বীকার করেছিলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে বেশ কিছুটা দেরি হয়েছিল। ফলে প্রার্থী ঘোষণা করতে অনেকটা সময় লেগে গেছে। আর এই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট পার্টির নিচুতলার বড় অংশই মেনে নেয়নি বলে অনেকের বক্তব্য।
উপর থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়ারও বিরুদ্ধেও শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে নেতাদের একাংশ সরব হন। একই সঙ্গে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের রিপোর্টের স্বীকার করা হয়েছে তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি এবং বিজেপির বিকল্প তৃণমূল এই বিশ্বাস থেকে এখনও মানুষকে বের করে আনা যায়নি। আর সে কারণেই এবারের নির্বাচনে বিজেপি অনেক বেশি নিষ্ক্রিয় থাকলেও ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।
বেশ কিছু কেন্দ্রে বিজেপি (BJP) এতটা ভোট পাবে তা ধারণার বাইরে ছিল। তৃণমূল ও বিজেপির বাইনারি ভাঙা যায়নি, ফল প্রত্যাশিত হয়নি বলে শেষদিনেও স্বীকার করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসাবে মূলত যে বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে এসেছে তা হল, এক) সরকারি সামাজিক প্রকল্পে উপকৃত মানুষ তৃণমূলের উপর আস্থা রেখেছেন। দুই) গ্রামবাংলায় সংগঠন এখনও জেতার মতো জায়গায় নিজেদের তুলে ধরতে পারেনি। তিন) তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি এবং বিজেপির বিকল্প তৃণমূল এই তত্ত্বেই সিলমোহর দিয়েছে ভোটাররা। চার) কিছু জেলার নেতৃত্বের ভূমিকাও যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল না। পাঁচ) গরিব মানুষের কাছে এখনও দলকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরা যাচ্ছে না। ছয়) ইন্ডিয়া জোটে একই মঞ্চে তৃণমূলের সঙ্গে থাকা নিয়েও ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
এদিন বৈঠকে উপস্থিত পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বাংলায় দলের খারাপ ফল ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরে অবশ্য সাংবাদিক বৈঠকে সীতারাম বলেন, এবার বাংলায় দলে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। নতুন ছেলেমেয়েরা যেভাবে ভোটে লড়াই করেছে তা প্রশংসনীয়। নতুন পার্টি তৈরি হয়ে গিয়েছে। ভোটের কাটাছেঁড়া এবার একেবারে নিচুতলা থেকে শুরু করতে চাইছে আলিমুদ্দিন। গোটা জুলাই মাস ধরে শাখা থেকে জেলা কমিটিগুলি লোকসভা ভোটের ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করবে। এই সব নির্যাস নিয়েই আগামী ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট কল্যাণীতে রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনে বসবে সিপিএম। তার আগে ২৮ থেকে ৩০ জুন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হবে দিল্লিতে। এদিকে, এদিন সাংবাদিক বৈঠকে নিট কেলেঙ্কারি নিয়ে সরব হয়ে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, একটা সিস্টেমকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে সিট গঠন করা হোক।