বিরোধী সদস্যদের ‘অপহরণ’, সেই কৃষ্ণচন্দ্রপুর পঞ্চায়েত এল তৃণমূলের দখলে, বিলি সবুজ রসগোল্লা
প্রতিদিন | ২২ জুন ২০২৪
সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: আগেই মথুরাপুরের (Mathurapaur) কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দখলের মতো সদস্য সংখ্যা জোগাড়ের সমর্থ হয়েছিল শাসকদল তৃণমূল। বিজেপি-সিপিএম-নির্দলের জোট পরিচালিত পঞ্চায়েত পড়েছিল মুখ থুবড়ে। অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বিরোধীশূন্য হয়ে গেল ওই পঞ্চায়েত! প্রধান ও উপপ্রধান পদত্যাগ করায় এবং পঞ্চায়েতের বাকি পাঁচ সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সহজেই বিরোধী জোট পরিচালিত পঞ্চায়েতের দখল নিল শাসকদল। এই উপলক্ষে শুক্রবার এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা মেতে উঠলেন বিজয়োল্লাসে। চলল সবুজ আবির খেলা। বিলি করা হলো সবুজ রসগোল্লাও।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayat Election 2023) মথুরাপুর লোকসভার কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছিল বিরোধী জোট। মোট ১৫ টি আসনের গ্রাম পঞ্চায়েতে ছটি বিজেপি, তিনটি সিপিএম ও দুটি নির্দলের দখলে যায়। তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল চারটি আসন। এই পঞ্চায়েতটি দখলের জন্য জয়ী বিরোধী সদস্যদের অপহরণ করা হয় বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে যথেষ্ট জলঘোলা হয়।
তবে পঞ্চায়েত ভোটের পর পরই দুই বিরোধী সদস্য তৃণমূলে (TMC) যোগদান করেন। লোকসভা ভোটের পর বিজেপি ও সিপিএমের চার পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। তখনও পঞ্চায়েত বোর্ডে প্রধান হিসেবে ছিলেন বিজেপির অনুপ কুমার মিস্ত্রি ও উপপ্রধান সিপিএমের (CPM) সফিকুল ঘরামি। আরও ৩ জন পঞ্চায়েত সদস্য তখনও ছিলেন বিরোধী শিবিরে। শাসকদল পঞ্চায়েত দখলে অনাস্থা ভোটের তোড়জোড় শুরু করেছিল। কিন্তু তার আর প্রয়োজন হল না। পঞ্চায়েত বোর্ডের প্রধান ও উপপ্রধান পদত্যাগ করে শুক্রবার শাসকদলেই নাম লেখান। শাসকদলে যোগ দেন বাকি ৩ পঞ্চায়েত সদস্যও। ফলে বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েতে বিডিওর নির্দেশে এদিন নতুন প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচিত করা হয়। বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন প্রশান্ত হালদার এবং উপপ্রধান করা হয়েছে সুশান্ত মণ্ডলকে।
বিরোধীদের কাছ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত (Gram Panchayat) বোর্ড নিজেদের দখলে নিয়ে নেওয়ায় এদিন ওই এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা এলাকায় পালন করেন বিজয় উৎসব। মেতে ওঠেন তাঁরা সবুজ আবির খেলায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলি করা হয় সবুজ রঙের রসগোল্লাও। পঞ্চায়েতের পুরুষ সদস্যরা সবুজ পাঞ্জাবি ও মহিলা সদস্যরা সবুজ শাড়িতে পরে এদিন পঞ্চায়েতে আসেন। পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য করে বোর্ডের দখল নেওয়ায় যদিও শাসকদলকেই দুষেছে বিজেপি।
মথুরাপুর লোকসভা ভোটে এবারের বিজেপি প্রার্থী অশোক পুরকাইত প্রশ্ন তুলেছেন, ”রাতারাতি এমন কী ঘটল যে প্রধান ও উপপ্রধানকে পদত্যাগ করতে হল?” তাঁর দাবি, আসলে প্রধান ও উপপ্রধান-সহ বিরোধী পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা, মানসিক অত্যাচার চালিয়ে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিল শাসকদল। সেই চাপের মুখে প্রধান ও উপপ্রধান পদত্যাগ করতে ও বিরোধী সদস্যরা তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে বিজেপি প্রার্থীর দাবি।
মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ (TMC MP) বাপি হালদার অবশ্য বিরোধীদলের এমন যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ”বিজেপির এসব নাটকে আর কাজ হবে না। এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে ও মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নযজ্ঞে শামিল হতেই পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান পদত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।” অন্যান্য বিরোধী সদস্যরাও একইভাবে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। এলাকায় কোনও আতঙ্কের পরিবেশই নেই। প্রধান ও উপপ্রধান তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিরোধী সদস্যরাও জানিয়েছেন, তাঁদের উপর কোনও চাপ ছিল না। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাকে উন্নয়নে ভরিয়ে দিতেই নবনির্বাচিত মথুরাপুরের সাংসদকে সমর্থন করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তাঁরা।