শুক্রবার দিনহাটার নৃপেন্দ্র নারায়ণ স্মৃতি সদনে তৃণমূলের সংবর্ধনা সভায় বক্তব্যে উদয়ন জানান, ওই পুরসভার কয়েক জন কাউন্সিলর জোর না-করে, হুমকি না-দিয়ে ‘সাধু সেজে’ নির্বাচনী প্রচার করেছেন। সে জন্যই কোচবিহার লোকসভার অন্তর্গত দিনহাটা পুরসভায় তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে। উদয়ন এ-ও জানান, ওই ‘সাধু’ কাউন্সিলররা ঠিক এই ছকেই পুরসভার ভোট করেন কি না, সেটা দেখবেন। তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘‘আমরা কোচবিহার শহরে ভোটে হেরেছি। দিনহাটা শহরে ভোটে হেরেছি। দিনহাটা শহরে হারের পিছনে তৃণমূলের কমিটি যেমন দায়ী তেমনই দিনহাটার নাগরিক হিসাবে আমিও ততটাই দায়ী। কিন্তু সব থেকে বেশি দায়ী দিনহাটা পুরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর। তাঁরা নিজেদের গায়ে যেন কালি-না লাগে, তাঁদের মানুষ যেন কিছু না বলতে পারেন, তাঁরা ভোটটা এমন করে করেছেন যেন কারও উপর কোন জোর দেখাচ্ছি না। কাউকে কোনও হুমকি দিচ্ছি না। একদম সাধুর মতো ভোট করিয়েছেন। তার ফলস্বরূপ আমরা ২,০০০ ভোটে হেরেছি। না-হলে আমরা হারতাম না।’’
পর ক্ষণেই উদয়ন বলেন, ‘‘এ বার যাঁরা সাধুর বেশ ধারণ করেছিলেন, আগামী পুরসভা নির্বাচনে তাঁরা গায়ের জোর না দেখিয়ে কী ভাবে ভোটে জেতেন সেটাই দেখার।’’রাজ্যের মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর জেলার রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে শোরগোল। বিজেপির জেলা সভাপতি সুকুমার রায়ের মন্তব্য, ‘‘সন্ত্রাস ছাড়া তৃণমূল জিততে পারবে না, তারা ভাল মতো জানে সেটা। তাই নির্বাচনে তারা সন্ত্রাস করেই। দিনহাটাতেও সন্ত্রাস-না করলে তারা জিততে পারত না।’’
অন্য দিকে, উদয়ন আবার বার্তা দিয়েছেন শান্তি বজায় রাখারও। ইতিমধ্যে ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’র অভিযোগে কোচবিহার ঘুরে গিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর ফাঁসিদেওয়ায় এসে কোচবিহার ঘুরে গিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদয়নের বার্তা, ‘‘কোথাও যদি শুনি, কারও দোকান বন্ধ করে দিয়ে, কাউকে হুমকি দিয়ে টাকা তুলে মাংস খাওয়া হচ্ছে, মদ খাওয়া হচ্ছে, তা হলে তার আর দল করার প্রয়োজন নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘টাকা নেবেন আপনারা, মদ খাবেন আপনারা, মাংস খাবেন আপনারা, আর দুর্নাম পোহাতে হবে দলকে এবং নেতৃত্বকে।’’ কোচবিহারের নবনির্বাচিত সাংসদ জগদীশচন্দ্র বসুনিয়াকে সংবর্ধনা দেওয়ার ওই সভায় উদয়ন দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্য করে জানান, বেশ কিছু অভিযোগ আসছে দোকান বন্ধ করে দিয়ে টাকা তুলে মদ-মাংস খাওয়ার। যদি কেউ এ রকম করেন তা হলে তার দল করার প্রয়োজন নেই।
উদয়নের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপি নেতৃত্বের কটাক্ষ, ‘‘তোলাবাজি, লুটপাট, মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়া— এ সব করেই তো তৃণমূল কংগ্রেস চলছে। প্রত্যেকটা পঞ্চায়েতে ভয় দেখিয়ে বিজেপির সদস্যদের নিজেদের দলে নিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূলে যোগদান করার পরেও বহু পঞ্চায়েত সদস্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বহু দোকানপাট বন্ধ করে দিয়ে তাঁদের কাছে জরিমানা নিচ্ছে। এটাই তৃণমূলের কালচার। তাই মানুষের সামনে নেতৃত্ব যাই বলুন, তৃণমূলে এই কালচার বন্ধ হবে না।’’