• ডাক্তারির পরীক্ষায় ছেঁড়া ওএমআর, নষ্ট সময়ও! এনটিএকে পরীক্ষার্থীর ক্ষতি নিয়ে কী বলল হাই কোর্ট?
    আনন্দবাজার | ২২ জুন ২০২৪
  • সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা নিট দিতে গিয়ে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিলেন বাংলার এক পরীক্ষার্থী। হলে তাঁর হাতে এসেছিল একটি ছেঁড়া ওএমআর শিট। কিন্তু তা নিয়ে অভিযোগ জানানোর পরেও উত্তরপত্রটি বদলে দেওয়া হয়নি। বদলে উত্তরপত্রটি তাঁর থেকে নিয়ে দেড় ঘণ্টা তাঁকে হলে বসিয়ে রাখা হয় এবং শেষে জানানো হয়, ছেঁড়া ওএমআরশিটেই পরীক্ষা দিতে হবে তাঁকে। এমনই অভিযোগ এনেছিলেন ফিয়োনা মজুমদার নামে এক পরীক্ষার্থী।

    বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ফিয়োনা। আদালতকে পরীক্ষার্থী জানান, পরীক্ষার দিন তাঁর দেড় ঘণ্টা সময় নষ্ট করা হলেও তাঁকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়নি। বরং বাকি থাকা যৎসামান্য সময়ের মধ্যেই পরীক্ষা শেষ করতে হয়। এ ব্যাপারে পরে পরীক্ষা পরিচালনাকারী সংস্থা এনটিএ-র কাছে তিনি গোটা ঘটনাটির বিবরণ দিয়ে আবার পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ জানালেও সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি এনটিএ। আর সে জন্যই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। আদালতকে ফিয়োনা অনুরোধ করেছিলেন, তাঁকে আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। শুক্রবার ওই মামলার রায় দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

    আদালতে নিটের পরিচালন সংস্থা এনটিএ ওই পরীক্ষার্থীর আনা সমস্ত অভিযোগ এবং যুক্তি অস্বীকার করেছিল। হাই কোর্টে এনটিএ বলেছিল, ‘‘পরীক্ষার্থী যা যা বলেছেন তা সত্য নয়। ওই ওএমআর স্ক্যান করা হয়ে গিয়েছিল বলে শেষ পর্যন্ত আর বদলানো যায়নি। তা ছাড়া ওই ওএমআরের উপরের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মাত্র। তাকে ‘ছেঁড়া’ বলে অসত্য ভাষণ করেছেন পরীক্ষার্থী। আর তাঁকে দেড় ঘণ্টা হলে বসিয়েও রাখা হয়নি। বড়জোর কয়েক মিনিট সময় নষ্ট হয়েছিল তাঁর।’’

    শুক্রবার অবশ্য আদালত তার নির্দেশে পরীক্ষার্থীর পক্ষেই কিছু মন্তব্য করেছে। মামলাটি উঠেছিল বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে। তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষাকেন্দ্রে মামলাকারী তথা পরীক্ষার্থীর সময় নষ্ট করা হয়েছে এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে বলে মনে করছে আদালত।’’

    কিসের ভিত্তিতে এই মন্তব্য? শুক্রবারই এনটিএ-র এই বক্তব্য যাচাই করার জন্য বিচারপতি সেনগুপ্ত পরীক্ষা হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছিলেন। তাতে দেখা যায়, পরীক্ষার্থী দীর্ঘ ক্ষণ পরীক্ষার হলে পরীক্ষা না দিয়ে বসে রয়েছেন। সময়টা দেড় ঘণ্টার কম নয়।

    পরে পরীক্ষার্থীও আদালতকে জানান, তাঁর কাছ থেকে ছেঁড়া ওএমআর শিট বদলে দেওয়ার নামে সেটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেদিন। বলা হয়েছিল, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানানো হবে উত্তরপত্রটি বদলানো যাবে কি না। কিন্তু সেই একই ওএমআর ফিরে আসে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পরে। তত ক্ষণ পরীক্ষা দিতে পারেননি ওই পরীক্ষার্থী।

    পরীক্ষার্থীর আইনজীবী কল্লোল বসু আদালতে সওয়াল করেন, যদি একই উত্তরপত্রে পরীক্ষা দিতে হত, তবে তারা আগেই সে কথা বলে দিতে পারত। তাতে অযথা পরীক্ষার্থীর সময় নষ্ট হত না। তিনি পরীক্ষা দিতে পারতেন।

    এই সমস্ত তথ্য-প্রমাণ হাতে পাওয়ার পরেই বিচারপতি পরীক্ষার্থীর ‘ক্ষতি হওয়া’ নিয়ে ওই মন্তব্য করেন। যদিও তার পরেও তিনি পরীক্ষার্থীর পুনরায় পরীক্ষায় বসার আর্জিতে সায় দেননি।

    বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘নিট পরীক্ষা আবার হওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে। এই অবস্থায় হাই কোর্ট কোনও নির্দেশ দেবে না। মামলাকারী প্রয়োজন মনে করলে শনিবার শীর্ষ আদালতে যেতে পারবেন। কারণ, রবিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গ্রেস নম্বর পেয়েছেন এমন ১৫৬৩ জন পরীক্ষার্থীর পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।’’

    ডাক্তারির পরীক্ষায় ১৫৬৩ জনের গ্রেস মার্কস নিয়ে বিতর্কে ইতিমধ্যেই ওই ১৫৬৩ জনের নম্বর বাতিল করা হচ্ছে বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এই ১৫৬৩ জনের আবার পরীক্ষা নেওয়ার কথাও হচ্ছে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই হাই কোর্ট বাংলার এই পরীক্ষার্থীকে পরামর্শ দিয়েছে প্রয়োজন হলে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার। একই সঙ্গে ফিয়োনার আসল ওএমআর শিট এবং সিসিটিভি ফুটেজ এক বছরের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতেও বলা হয়েছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)