স্থানীয় সূত্রে খবর, গুসকরা শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা নীলিমা মুখোপাধ্যায় বুধবার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন। নীলিমার স্বামী ভবানী মুখোপাধ্যায় পেশায় ব্যবসায়ী। ওষুধের দোকান রয়েছে তাঁর। ওই দম্পতির একমাত্র সন্তান পল্লবী মুখোপাধ্যায় স্নাতক পাশ করে কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত।
বুধবার ভবানীবাবু তখন বাইরে ছিলেন। বাড়িতে কেউ ছিলেন না। ওই সময় নীলিমা আত্মঘাতী হন বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। পরিবার সূত্রে খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন নীলিমা। গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার রাতেই নীলিমার তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। রটন্তী কালী শ্মশানে দাহকার্য হয়।
মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে কলকাতা থেকে তড়িঘড়ি বাড়ি যান পল্লবী। মায়ের দেহ আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তরুণী। তার পর শ্মশানঘাটেই মালাবদল করে বিয়ে করেন তিনি। মায়ের ইচ্ছাপূরণ করতে দাহের আগে শ্মশানে তাঁর দেহ পাশে রেখে প্রেমিকের গলায় মালা পরান তরুণী। এক দিকে, মায়ের মৃত্যুশোক অন্য দিকে, নতুন জীবনে প্রবেশ করার অনুভূতি। সব মিলিয়ে তরুণীকে দেখা যায় চোখের জলে ভাসতে ভাসতে মালাবদল করতে। প্রেমিক তাঁর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার সময় মায়ের দেহের দিকে এক পলক চেয়ে রইলেন পল্লবী। সেই দৃশ্য মোবাইল বন্দি করে রাখেন উপস্থিত শ্মশানযাত্রী এবং আত্মীয়েরা। পরিবারের এ রকম গভীর শোকের আবহে আনন্দের ঘটনাও ঘটল।
ভাতারের বেরোয়া গ্রামের বাসিন্দা জয়দীপ অধিকারীর সঙ্গে পল্লবীর কয়েক বছরের সম্পর্ক। দুই পরিবারের সম্মতিতে কিছু দিনের মধ্যেই তাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। পল্লবীর মা-ও চেয়েছিলেন মেয়ের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে। শেষে তাঁর দেহের সামনে বিয়ে করে মায়ের ইচ্ছাকে সম্মান জানালেন পল্লবী। পাত্রের বাবা মলয় অধিকারী জানান, তাঁদের একমাত্র সন্তান জয়দীপ। তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই ছেলের বিয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। কিন্তু আচমকা এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল... কিছু দিন পর ছেলের বিয়ে উপলক্ষে একটা অনুষ্ঠান করব বলে ঠিক করেছি।’’