• এই প্রথমবার কালো ভল্লুকের গণনা রাজ্যে উত্তরবঙ্গে অভিনব পদ্ধতিতে শুরু ডিসেম্বরেই
    বর্তমান | ২৯ নভেম্বর ২০২২
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ডুয়ার্স সহ উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি ঢালে রয়েছে অসংখ্য ব্ল্যাক বেয়ার বা কালো ভল্লুক। শীতের শুরুতে তাদের দেখাও মিলছে। চা বাগান থেকে পাহাড়ি বস্তিতে তাদের আনাগোনা। কিন্তু উত্তরবঙ্গে কালো ভল্লুকের সংখ্যা কত? তার সঠিক তথ্য নেই। বাঘ, গণ্ডারের সুমারি বা গণনা হলেও এখনও পর্যন্ত একবারও ভল্লুকের সুমারি হয়নি। তাই মোট কত সংখ্যক ভল্লুক রয়েছে এই অঞ্চলে, তার কোনও হদিশ নেই। এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যে প্রথমবার কালো ভল্লুকের সুমারি শুরু হতে চলেছে উত্তরবঙ্গে। আগামী ডিসেম্বর থেকেই গণনার কাজ শুরু হবে। 

    এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের বনদপ্তরের চিফ কনজারভেটর অব ফরেস্ট (ওয়াইল্ড লাইফ) দেবল রায় বলেন, যেহেতু এই প্রথমবার আমাদের রাজ্যে ব্ল্যাক বেয়ারের সুমারি হবে, তাই এখন চলছে প্রশিক্ষণ পর্ব। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর ডিসেম্বর মাসেই সুমারি শুরু হয়ে যাবে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে কালো ভল্লুক একমাত্র উত্তরবঙ্গেই দেখা যায়। শীতের মরশুমে বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের দেখা মেলে। পাহাড় ও সমতলের মাঝামাঝি অঞ্চলে বসবাস করে এই বন্যপ্রাণ। মাঝেমধ্যে তাদের আক্রমণের শিকার হন অনেকে। আবার দূর থেকে কালো ভল্লুক দেখে বহু পর্যটক উচ্ছ্বসিতও হন। গত কয়েকদিনে ডুয়ার্স সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি চা বাগান এলাকায় থেকে কালো ভল্লুক উদ্ধার হয়েছে। বনদপ্তরের অনুমান, আগের চেয়ে এখানে ভল্লুকের সংখ্যা বেড়েছে বলেই তারা বিভিন্ন সময় চা বাগান বা লোকালয়ে চলে আসছে। তাই এই বন্যপ্রাণ রক্ষার স্বার্থেই গণনা প্রয়োজন। 

    বনদপ্তরের দাবি, উত্তরবঙ্গের যেখানে যেখানে ভল্লুকের অস্তিত্ব রয়েছে, সেইসব এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত এলাকাকে ২০০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। তবে ভল্লুকের সুমারি বেশ কঠিন কাজ। রয়্যাল বেঙ্গলের সুমারিও সহজ নয়। তবে প্রতিটি বাঘের পিঠে যে কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে, তা স্বতন্ত্র। তাই বাঘ চিহ্নিত করতে সুবিধা হয়। জঙ্গলে লাগানো ক্যামেরায় ছবি তুলে সেই ‘স্ট্রাইপ অ্যানালিসিস’ করে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু ভল্লুকের ক্ষেত্রে বিশেষ উপায়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই সুমারি করা হবে। প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ।

    প্রথমেই ভল্লুকের পছন্দের কিছু খাবার একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হবে। সেই জায়গাটির চারদিক সূক্ষ্ম কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হবে, যা ভল্লুক সহজে দেখতে পাবে না। কিন্তু খাবারের দিকে গেলেই সেখানে খোঁচা খাবে। সেই কাঁটাতারে লেগে যাবে ভল্লুকের লোম ও রক্ত। বনদপ্তরের কর্মীরা তা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠাবেন। ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা হবে, ক’টি ভল্লুক এসেছিল। এই অভিনব পদ্ধতি ২০০টি সেক্টরের বিভিন্ন জায়গায় করা হবে। কোনও ভল্লুক যাতে বাদ না পড়ে যায়, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।  দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্কে তোলা  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)