কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রথম থেকেই অভিযোগের দায় মালগাড়ির চালকের ঘাড়ে চাপাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই সবের মাঝেই আবার 'যৌথ পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট' জমা পড়ে। সেখানেও অধিকাংশ রেল আধিকারিক দুর্ঘটনার দোষ চাপান মালগাড়ির চালকের ওপরেই। বলা হচ্ছে, রেলের নিয়ম অনুযায়ী, কাগুজে সিগন্যাল পাওয়ায় ধীর গতিতে মালগাড়ি চালানোর কথা ছিল চালকের। তবে অনেক দ্রুত গতিতে মালগাড়িটি ছুটছিল বলেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই আবহে এবার দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন মালগাড়ির সহকারী চালক। উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার দিনে সহকারী চালকের মৃত্যু ঘটেছে বলে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান। পরে জানা যায়, চালকের মৃত্যু হলেও সহকারী চালক বেঁচে আছেন। এই আবহে সেই সহকারী চালক মনু কুমার দাবি করলেন, সেই ট্র্যাকে যে অন্য একটি ট্রেন ছিল, তা তাঁরা জানতেনই না।
এদিকে একই ট্র্যাকে ট্রেন আছে, তা দূর থেকে দেখাও যায়নি? মালগাড়ির সহকারী চাল মনু কুমার রেল আধিকারিকদের জানান, রেললাইনে বাঁক ছিল। আর তাই দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসটি তাদের নজরে পড়েনি। তাই সময় মতো ট্রেনে ব্রেক কষে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়নি। জানা গিয়েছে, যেই ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে, তার ২০০ মিটার আগে লাইনটি বাঁক খেয়েছে। এদিকে দুর্ঘটার সময় পাশের ট্র্যাকে অন্য একটি ট্রেন যাচ্ছিল। এই সব মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনটি নজরে পড়েনি মালগাড়ির চালক এবং সহকারী চালকের। এদিকে রেল আধিকারিকদের মনু জানান, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনটি নজরে আসতেই আপতকালীন ব্রেক কষেছিলেন মালগাড়ির চালক। তবে গতি সেই ট্রেনটিকে টেনে নিয়ে যায়। বর্তমানে মনু কুমার আরপিএফ-এর নজরদারিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি আছেন। এদিকে মনু কুমারের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। রেল সেফটি কমিশনারের তদন্তকারীরা তাঁর সঙ্গে পরে কথা বলবেন। এদিকে মনরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা হচ্ছে মনুর মানসিক স্থিতি জানার জন্যে।
এদিকে জমা পড়া যৌথ রিপোর্ট অনুযায়ী, নিয়ম অমান্য করে অত্যধিক গতিতে মালগাড়িটি চলছিল বলেই এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে এই যৌথ রিপোর্টে একজন চিফ লোকো ইন্সপেক্টর অবশ্য ভিন্ন মত জানিয়েছেন। তাঁর মতে ভোর থেকে অটোমেটিক সিগন্যাল খারাপ হওয়ায় এই গোটা সেকশনে 'অ্যাবসোলুট ব্লক' করা উচিত ছিল। অর্থাৎ, একটা সময়ে এই লাইন দিয়ে একটি ট্রেনকেই পার করার অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যালিং, মেকানিকাল এবং ট্রাফিক দফতরের বাকি আধিকারিকরা এই দুর্ঘটনার দায় চাপিয়েছেন মালগাড়ির মৃত চালকের ঘাড়েই।
রিপোর্ট অনুযায়ী, টি/এ৯১২ সংখ্যক 'পিএলসিটি' ইস্যু করা হয়েছিল মালগাড়ির চালককে। রঙ্গপানির স্টেশন মাস্টার সেই কাগুজে সিগন্যাল দিয়েছিলেন। সেই টিকিটে বলা হয়েছিল, রঙ্গপানি রেল স্টেশন এবং ছত্তরহাট জংশনের মধ্যে যতগুলি অটোমেটিক সিগন্যাল আছে, সেগুলি পার করার অনুমতি দেওয়া হল। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের কাগুজে সিগন্যাল ব্যবহার করা হলে প্রতি অটোমেটিক সিগন্যালে ১ মিনিট করে অপেক্ষা করতে হবে দিনের বেলায়। এরপর ১০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে এগোতে হবে। এমনকী রঙ্গাপানির স্টেশনমাস্টারের দেওয়া টি৩৬৯ সংখ্যক অনুমতিপত্রে জানানো হয়েছিল, ট্রেনের গতিবেগ যাতে কোনও ভাবেই ১৫ কিলোমিটারের বেশি না হয়। এই আবহে লাল সিগন্যাল পার করার অনুমতি থাকলেও দুর্ঘটনার স্থল দিয়ে খুবই ধীর গতিতে মালগাড়িটি পার করার কথা ছিল। এই আবহে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলেই বোঝা যাবে, কেন বিধি অমান্য করে এত দ্রুত গতিতে সেখান দিয়ে ছুটেছিল সেই ঘাতক মালগাড়িটি।