‘ভুল’-এর গেরো যেন আর কাটছে না প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেটে। ২০২৩-এ অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তরের অপশন নিয়েও প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ল। পরীক্ষা পদ্ধতির স্বচ্ছতা বজায়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ প্রশ্নের মডেল অ্যানসার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছিল। প্রশ্নপত্র ও মডেল উত্তর চ্যালেঞ্জ করেই ইতিমধ্যে ৪৬৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে পর্ষদে। পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল শুক্রবার বলেন, ‘সোমবার থেকে পর্ষদের বিশেষজ্ঞ কমিটি অভিযোগ বিশ্লেষণ শুরু করবে। মডেল অ্যানসার এবং অভিযোগ খতিয়ে দেখে যেটা সঠিক, সেটাই চূড়ান্ত করা হবে। তার ভিত্তিতেই ফলপ্রকাশ হবে।’গত বছর টেটের দিনই প্রশ্নপত্র এবং ওএমআর কপি পেয়েছিলেন পরীক্ষার্থীরা। তার পর উত্তরমালা প্রকাশ করে পর্ষদ। পরীক্ষার্থীদের তা ভুল মনে হলে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতেই সাড়ে চারশোর বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে ঠিক ক’টি প্রশ্নের উত্তর ভুল বলে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, তা জানা যায়নি।
২০১২, ২০১৪, ২০১৭ এবং ২০২২-এর প্রাথমিকের টেটেও প্রশ্ন ভুল অথবা উত্তরের অপশন ভুল অভিযোগে মামলা হয়েছিল। ২০১২-র টেটের ভিত্তিতে সাড়ে ১৭ হাজার নিয়োগের পরেও একটি প্রশ্নের উত্তর ভুলের জেরে আদালতের রায়ে আরও ৯০০ জনের চাকরি হয়। ২০১৪-র টেটের ভিত্তিতে দু’দফায় ৪২,৯৪৯ ও সাড়ে ১৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগের পর ছ’টি প্রশ্ন ভুল নিয়ে মামলায় দফায় দফায় আরও অসংখ্য (১৩০, ৯৭, ৪৭৪ ও ৭৩৮) নিয়োগ হয়েছে।
অতিরিক্ত এক নম্বর পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে ২৬৯ জনের চাকরিও বাতিল করেছে হাইকোর্ট। ২০১৭-য় ২০টি এবং ২০২২-এর টেটের প্রশ্ন ও উত্তরের অপশনে ২৪টি ভুল সংক্রান্ত মামলায় যথাক্রমে বিশ্বভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়িত্ব দিয়েছিল হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। তা চ্যালেঞ্জ করে পর্ষদ ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে। পর্ষদের যুক্তি, প্রশ্ন বা উত্তরে ভুল রয়েছে কিনা, তা যাচাইয়ে সবচেয়ে উপযোগী পর্ষদের বিশেষজ্ঞ কমিটিই। কমিটিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিও রয়েছেন।
চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, প্রশ্ন বা উত্তরের অপশনে ভুল নির্ধারিত হওয়ার আগেই নিয়োগ হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেই প্রশ্ন ভুলে সব পরীক্ষার্থী বা সব মামলাকারীর চাকরি কিন্তু বিবেচনা করা হয় না। বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ডিভিশন বেঞ্চেরও এক সময়ে পর্যবেক্ষণ ছিল, প্রশ্ন ভুলে কিছু সংখ্যক মামলাকারীই কি শুধু নম্বর পেতে পারেন নাকি সবার সমান অধিকার?