জতুগৃহ জানা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নয় কেন? বাংলোর আগুন ঘিরে ক্ষোভ অব্যাহত
এই সময় | ২২ জুন ২০২৪
এই সময়, কলকাতা ও আলিপুরদুয়ার: ঘটনার পরে অতিবাহিত চার দিন। জলদাপাড়ার হলং বনবাংলো অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিয়ে এখনও নতুন নতুন তথ্য আসছে। বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, বাংলোয় সেই সময় এসি মেশিন চলছিল কিনা। তার পর থেকে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। যদিও বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা জানিয়েছেন, কী কারণে আগুন লেগেছিল ওই বাংলোয়, তা তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরেই পরিষ্কার হবে। তবে সেই রাতে এসি চলছিল না বলেই জানিয়েছেন তিনি।কেন বাংলোয় আগুন, তা নিয়ে যখন বিতর্ক চরমে, সেই সময়ে বনকর্তারা অন্তর্ঘাত-নাশকতা এবং গাফিলতির তত্ত্ব খারিজ করে দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসি মেশিনের বিষয়ে সরাসরি জানতে চান। শুক্রবার বীরবাহা বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তবে একটা কারণ উঠে আসছে। সেটা হলো পুরোনো বাংলোটিতে ইঁদুরের উপদ্রব ছিল। সুইচ বোর্ডের ভিতরে এবং অন্যান্য জায়গায় বিদ্যুতের তার ইঁদুরে কেটে থাকতে পারে। তবে সেটাই শর্ট সার্কিটের কারণ কিনা, তা তদন্তের রিপোর্ট জমা পড়লে জানা যাবে।’
ইতিমধ্যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বাংলোর দগ্ধ কাঠামো থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা গাফিলতির অভিযোগ করছেন। মাদারিহাট লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘বেসরকারি হোটেল-লজগুলিতে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে দমকল আধিকারিকরা হানাদারি চালান। হলং বনবাংলোর ক্ষেত্রে তাঁদের তৎপরতা কোথায় ছিল? ৫৭ বছরের পুরোনো কাঠের বাংলোটি যে জতুগৃহ হয়ে উঠেছিল, তা জানার পরেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?’
হেরিটেজ বাংলোয় যথেষ্ট সংখ্যক সিসি ক্যামেরা কেন লাগানো হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের পশ্চিম রেঞ্জের প্রাক্তন ও অবসরপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার রঞ্জন তালুকদার সোশ্যাল মিডিয়ায় হলং বনবাংলো ভস্মীভূত হওয়ার জন্য গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যখন হলং বনবাংলো দেখভালের অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলাম, তখন বহু গলদ আমি তুলে ধরায় আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল। সেদিন যদি আমার প্রস্তাবে কর্ণপাত করা হতো, তবে হয়তো ওই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’
আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে স্থানীয় এলাকায় চর্চা শুরু হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো, আলিপুরদুয়ার জেলার উচ্চপদস্থ সরকারি আমলাদের একাংশ যখন তখন লোকলস্কর নিয়ে হলং বাংলোয় চলে আসতেন। ১৮ জুন, দুর্ঘটনার দিনেও কেউ ওই বনবাংলোতে এসেছিলেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। শুক্রবার সিপিএমের আলিপুরদুয়ার জেলা কমিটির সদস্য মৃদুল সেনগুপ্ত দাবি করেন, ‘ঘটনার তদন্তভার দপ্তরের কর্তাদের না দিয়ে অন্য কোনও সংস্থাকে দেওয়া উচিত।’