এই সময়, গোসাবা: বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে বিশেষ স্থান রয়েছে সুন্দরবনের। ভ্রমণপিপাসু মানুষ ফি বছর পাড়ি দেন সুন্দরবনের গা ছমছম করা নদী-খাঁড়িতে বিভক্ত এই ১৮ ভাটির দেশে। কিন্তু এতদিন পর্যটকদের সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের একেবারে দোরগোড়া অর্থাৎ গোসাবার পাখিরালয়ে পৌঁছতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।এ বার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুজোর আগেই দেশ-বিদেশের পর্যটকরা চার চাকা গাড়িতে চেপেই গোসাবার পাখিরালয় পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছে যেতে পারবে। তার জন্য শুরু হচ্ছে রো রো সার্ভিস। নদীতে ভেসেলের মাধ্যমে গাড়ি পারাপারের পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
সুন্দরবনে সব থেকে বেশি পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে গোসাবার পাখিরালয় পর্যটন কেন্দ্রে। এখনও পর্যন্ত আর এই পাখিরালয়ে আসতে হলে বাসন্তীর গদখালি পর্যন্ত এসে পর্যটকদের গাড়ির গাড়ির চাকা থেমে যায়। কারণ তার পথ থেকেই শুরু নদী। গাড়ি এ পারে রেখে তার পর সেই নদীপথে ফেরি সার্ভিস কিংবা লঞ্চ এবং যন্ত্রচালিত বোটে চেপেই পাখিরালয়ে পৌঁছতে হয় পর্যটকদের। এতে একদিকে যেমন সময় অপচয় হয় তেমনই অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয় পর্যটকদের।
এ বার পর্যটকরা সরাসরি গাড়ি নিয়েই নদীতে ভেসেলের উপর তুলে তারপর ১১০০ মিটার নদী পথ পেরিয়ে সোজা গোসাবায় পৌঁছতে পারবেন। সেখান থেকে ১১ কিলোমিটার স্থলপথে পর্যটকদের গাড়ি পৌঁছে যাবে পাখিরালয় পর্যটনকেন্দ্রে। বৃহস্পতিবার সুন্দরবনের পর্যটনে সেই যুগান্তকারী ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি কাজ দেখতেই গোসাবায় পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।
তাঁর সঙ্গে ছিলেন গোসাবার বিধায়ক সুব্রত মণ্ডল। মন্ত্রী বৃহস্পতিবার গদখালি ও গোসাবার দুই পাড়ের ভাসমান জেটি দু'টিতে ভেসেলের পরিকাঠামো খুঁটিয়ে দেখে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। মূলত সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তরের অর্থেই গোসাবার দু'টি দিকের রো রো ভেসেল সার্ভিস চালু হতে চলেছে। রোল অন রোল অফ সংক্ষেপে রো রো এই পদ্ধতিতে সারা বিশ্বেই জলপথে বড় বড় ভেসেলে করে পার হয় যাত্রিবাহী গাড়ি। সুন্দরবনে আর এই ব্যবস্থাপনা রূপায়ণ করছে রাজ্যের পরিবহণ দপ্তর।
অন্যদিকে, গোসাবা থেকে জটিরামপুর হয়ে পাখিরালয় পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার পথকে আরও প্রশস্ত করে সাড়ে পাঁচ মিটার করা হবে যাতে যানজট মুক্ত থাকে গোটা রাস্তাটি। এর জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর এই রাস্তার জন্য অর্থ ব্যয় করবে। পুজোর আগে এই রাস্তা ধরেই পর্যটকরা গাড়িতে চেপেই নদী পেরিয়ে পৌঁছে যাবেন নিজেদের গন্তব্যে।
এতেই এ বার পুজোয় পর্যটকদের ঢল নামার উজ্জ্বল সম্ভবনা তৈরি হতে চলেছে। গোসাবার বিধায়ক সুব্রত মণ্ডল বলেন, 'গোসাবা সম্পূর্ণ ব-দ্বীপ এলাকা। প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক মানুষ এখানে সুন্দরবনে বেড়াতে আসেন। মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা মাফিক নদীতে রো রো সার্ভিস চালু হলে আমূল পরিবর্তন ঘটবে গোসাবার অর্থনীতিতে।'
পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, 'মানুষের সুবিধার্থে রো রো সার্ভিস ও স্থায়ী জেটির কাজ শুরু হয়েছে সুন্দরবনজুড়ে। গোসাবা, মিনাখাঁর মতো সমস্ত পঞ্চায়েতে দ্বীপের মতো এলাকায় ভেসেলের মাধ্যমে গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন মানুষ। এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ চলছে। পুজোর পরেই কাজে আরও গতি আসবে। বিকল্প আর্থিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হবে।'