সংস্কৃতে মন্ত্রোচারণ, গোধূলি লগ্নে এক হলেন ব্রাজিলের ম্যানুয়েলা ও নবদ্বীপের কার্তিক
এই সময় | ২২ জুন ২০২৪
কলকা করা পানের পাতা দিয়ে চোখ ঢাকা, শুভদৃষ্টির সময় আলতো করে তাকালেন বিদেশিনী। নবদ্বীপের পাত্র কার্তিক মণ্ডল মন দিয়েছিলেন অনেকদিন আগেই। এবার শুভলগ্নে সারাজীবন ব্রাজিলিয়ান সুন্দরী ম্যানুয়েলা আলভেস দ্য সিলভাকে আগলে রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন। এদিকে বাঙালি পুরোহিত মশাই স্মার্ট অ্যাপের মাধ্যমে বাংলা মন্ত্র পর্তুগিজ ভাষায় বদলে দিচ্ছিলেন বটে। কিন্তু, মাঝফাঁকে বেশ কিছু সংস্কৃত মন্ত্রও উচ্চারণ করলেন ম্যানুয়েলা।প্রেমটা হয়েছিল অন্তর্জালে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম আলাপ তাঁদের। এরপর মন দেওয়া নেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই। কিন্তু, কার্তিক এবং ম্যানুয়েলার প্রেমের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ১৪,৭৬৬ কিমি দূরত্ব। কিন্তু, এই দূরত্ব পার করে বঙ্গ সন্তানের কাছে 'দৌড়ে এসেছিলেন' বিদেশিনী। এদিকে খুশিতে ডগমগ কার্তিকের পরিবার। শুক্রবার বাঙালি রীতি মেনেই বিয়েই হয় তাঁদের। হাতে শাঁখা-পলা পরেছিলেন ম্যানুয়েলা। মালা বদল, শুভদৃষ্টি সবটাই হয়েছে নিয়ম মোতাবেক। পুরোহিত অবশ্য মন্ত্র পড়ার সময় ট্রানস্লেটার অ্যাপ ব্যবহার করেছেন কিছু সময়। কিন্তু, সংস্কৃতেও মন্ত্রোচ্চারণ ধৈর্য্য সহকারে করেছেন ম্যানুয়েলা।
গান্ধর্ব মতে শুভদৃষ্টি থেকে শুরু করে হস্ত বন্ধন, মালা বদল থেকে সিঁদুর দান সবটাই হল। কার্তিক বলেন, 'আজ থেকে নতুন জীবন শুরু। পরিবারের সকলেই খুব খুশি।' এদিকে বাঙালি বধূ সাজে ম্যানুয়েলার ঠোঁটে উপচে পড়া হাসি। ইংরেজিতেই ব্রাজিলিয়ান সুন্দরী জানালেন, তিনি অত্যন্ত খুশি। নদিয়ার নবদ্বীপ ব্লকের ফরেস্ট ডাঙ্গা এলাকার মণ্ডল পরিবার কার্যত ভাসছে খুশিতে।
উল্লেখ্য, কার্তিক কিছুদিন সুরাটে ছিলেন। সেই সময়ই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ব্রাজিলের বাসিন্দা ম্যানুয়েলা আলভেস দা সিলভার। সোশ্যাল মিডিয়ার সেই আলাপ যে কখন বন্ধুত্ব এবং পরে প্রেমের রূপ নিয়েছে, তা বুঝতে পারেনি কেউ।
কার্তিক জানান, তাঁরা নতুন জীবনে পা রাখার পরিকল্পনা করেন এবং তাঁর প্রেমিকা ভারতে চলে আসে। তাঁর বাড়ি থেকেই বিয়ের আয়োজন করা হয়। প্যান্ডেল বাঁধা থেকে শুরু করে সানাই, কোনও কিছুর খামতি ছিল না। পড়শিরাও নাওয়া খাওয়া ভুলে বিয়ের আয়োজনে জুটেছিলেন। অন্যদিকে, বিদেশিনী শাড়ি পরা অভ্যাস করেছেন বেশ কয়েকবার। বাঙালি খাবারেও তাঁর অরুচি নেই। ঝালের জন্য কিছু খাবার তিনি খেতে না পারলেও ভাত-ডালে তাঁর অরুচি নেই। মাঝের মধ্যে ম্যানুয়েলার মনের কথা শোনার জন্য ব্যবহার করতে হচ্ছে ট্রান্সেটর অ্যাপ। কিন্তু, তাতে কী! ওই মনের কথা মনের মানুষ বুঝে যাচ্ছেন, কথা দিয়েছেন ভবিষ্যতেও শুনবে।