বাড়ির হেঁশেলে রান্নার জোগাড়ে নিত্যদিন খোঁজ পড়ে যে সমস্ত আনাজের, তার কোনওটির কেজি-প্রতি দাম ঘোরাফেরা করছে ১৫০-২০০ টাকার আশেপাশে, তো কোনওটিতে ৫০-৬০ টাকার চোখরাঙানি। সাধারণ আলুসিদ্ধ খেতে গেলে আলু কিনতে হবে ৩০-৪০ টাকা কেজি-দরে, তেতো করলার দামও জিভ বিস্বাদ করার মতো, ৮০ টাকা। বাজার-হাটে-মোড়ের জটলায় কান পাতলেই ছিটকে আসছে শব্দবন্ধ, ‘‘সাধারণ মানুষ কী খাবে বলুন তো!’’ দরের ছেঁকায় পরিস্থিতি এমনই যে, পাড়ায় সাতসকালে ভ্যান ঠেলে আসা আনাজবিক্রেতা বহু ক্ষেত্রে প্রতি কিলোগ্রামের দর হাঁকতে ‘ভয় পাচ্ছেন’ রীতিমতো। টোম্যাটোর দাম জিজ্ঞাসা করলে অনেকেই খানিকটা সইয়ে দেওয়ার সুরে বলছেন, ‘‘ওই তো, ১৫ টাকা শ’ (প্রতি ১০০ গ্রাম)!’’
সব মিলিয়ে, বাজারের আনাজের আগুন-দামে মধ্যবিত্তের হাতে যেন ফোস্কা পড়ার জোগাড়। ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, তীব্র গরমে এবং এতদিন বৃষ্টি না হওয়ায় আনাজের ফলন মার খেয়েছে। তার ফলেই দাম বেড়েছে এতখানি। এরই মধ্যে শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের একাংশে বর্ষা ঢুকেছে। আবহাওয়া দফতর বলছে, আগামী দিন তিনেকে দক্ষিণবঙ্গের বাকি এলাকাতেও বৃষ্টি নামবে বর্ষার। আমবাঙালির প্রশ্ন, বৃষ্টির জল কি বাজারের আগুন নেভাতে পারবে? কিন্তু পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন বৃষ্টি নিয়মিত হলেও আনাজের দাম কমে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হতে আরও ৭-১০ দিন অন্তত লাগবে।
পাইকারি বাজার কোলে মার্কেটের আনাজ বিক্রেতারা যেমন বলছেন, গরমের জেরে আনাজের আমদানি কমে গিয়েছিল। গত দিন দুয়েকে সেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু দাম কমা এখনও দূর অস্ত্। রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বলেন, “বৃষ্টি কম হওয়ার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আনাজের জোগান খুব কম। বিশেষত উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলি— এই চার জেলার মাটি কার্যত ফুটিফাটা। পাম্প চালিয়েও চাষের জমির উন্নতি সে রকম হচ্ছে না। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সাত থেকে ১০ দিন লাগবে। তা ছাড়া, ভিন্ রাজ্য থেকে আনাজের আমদানি এখনও সে রকম হয়নি।”
কমলের দাবি, নাসিকের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী, বেঙ্গালুরুর টোম্যাটো ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন যে, একে বৃষ্টি কম, তার উপরে নানা খাতে মোটা চাঁদা দিতে হচ্ছে। প্রবল গরমে বেঙ্গালুরু থেকে আসার পথেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্যাপসিকাম।
রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের আর এক সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, “একে তীব্র গরম, সেই সঙ্গে সম্প্রতি জামাইষষ্ঠীর জন্যও আনাজের দাম বেড়েছিল লাফিয়ে।” কোলে মার্কেটের আলু ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, ফেব্রুয়ারির বৃষ্টিতে আলুর ফলন মার খেয়েছে। তাই আলুর দাম এখনই কমার সম্ভাবনা কম। গড়িয়াহাট আনাজ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য তপন ভৌমিক বলেন, “মূলত বৃষ্টির অভাবে বেশির ভাগ বাজারে জোগান কম। আশা করছি, নিয়মিত বৃষ্টি হলে এই জোগান বাড়বে।”
তবে পাইকারি বাজারের দামের সঙ্গে খুচরো বাজারের দামের পার্থক্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনেকখানি বলেও অভিযোগ উঠছে। এ বিষয়ে তপনের যুক্তি, “পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজারে আনাজ আনার গাড়িভাড়া অনেকটাই বেশি। তা ছাড়া, প্রবল গরমে আনার সময়ে কিছু আনাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই দামও বেড়ে যাচ্ছে।” কিন্তু শুধু এই যুক্তিই ঠিক কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের অবশ্য দাবি, পাইকারি বাজার থেকে আনাজ কিনে খুচরো বাজারে ঠিক দামে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন কি না, তা দেখতে রাজ্য নির্দেশ দিলেই বাজার পরিদর্শন শুরু হবে।