• বুলবুলি নাচ থেকে সারিগান, ফিরে দেখুন হারানো শিকড়
    এই সময় | ২২ জুন ২০২৪
  • কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়

    মন্ত্র পড়া লাল ফেট্টি মাথায় বেঁধে তৈরি হচ্ছিলেন সৃষ্টিধর বাদ্যকর। চারটে এইচডি ক্যামেরা, একটা ড্রোন, দু’টো এইচডি অ্যাকশন ক্যাম, একটা ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা এবং ৮টা ট্র্যাক সাউন্ড রেকর্ডার নিয়ে রেডি কলকাতা থেকে আসা টিমের সদস্যরাও।কয়েক মিনিটেই শুরু হলো সৃষ্টিধরের গান আর নাচ। হাতের খোলা ঝুড়িতে তত ক্ষণে তালে তালে মাথা দোলাতে শুরু করেছে একটা গোখরো। সেদিন সৃষ্টিধরের গলায় যে গান শোনা গিয়েছিল, অনেক আগেই তার চল বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাংলায়। ‘সাপুড়িয়া গান’ নামে পরিচিত ওই শিল্প একটা সময়ে ছিল বাংলার লোকসংস্কৃতির অঙ্গ। আজ সৃষ্টিধরই সম্ভবত সাপুড়িয়া গানের শেষতম প্রতিনিধি।

    যেমন হারিয়েছে ‘জেলেপাড়ার সং’। প্রায় ২০০ বছর আগে সমাজপতিদের নির্দেশে আমহার্স্ট স্ট্রিটে রাজা রামমোহন রায়ের বাড়ির সামনে তাঁকে অপমান করতে রঙ্গ-তামাশা জুড়েছিল জেলেপাড়ার সঙেরা। এখন তাদের দেখতে পাওয়া তো দূর, কারা জেলেপাড়ার সং — সেই উত্তরটাও অজানা বেশিরভাগ মানুষের।

    এর পাশাপাশি সারিগান, পটের গান, আলকাপ, তুক্ষাগান এবং আরও অনেক কিছুই গত দু’শো বছরে বিদায় নিয়েছে বাঙালির জীবনচর্চা থেকে। এমনকী, যে ‘ছিনাথ বহুরূপী’ মেজদার কথায় ‘দি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ সেজে শ্রীকান্তদের বাড়িতে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়েছিল — তাঁদেরও আর দেখা মেলে না। পুরুলিয়ার যে ছৌ নাচে নাচিয়েরা হাঁটু দিয়ে মাটিতে পড়তেন, তা-ও বিলুপ্তপ্রায়।

    একান্ত ভাবেই গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি হিসেবে পরিচিত এইসব ‘ফোক পারফর্মিং আর্ট’ যাতে চিরতরে হারিয়ে না যায়, তার জন্যই যৌথ ভাবে উদ্যোগী হয় কলকাতার জার্মান কনস্যুলেট এবং কলকাতা সুকৃতি ফাউন্ডেশন। তাঁদেরই চেষ্টায় তৈরি হয়েছে প্রথম ভার্চুয়াল ‘ফোক পারফর্মিং আর্ট’ মিউজ়িয়াম। প্রকল্পের অন্যতম রূপকার অভিজিৎ দাশগুপ্ত বলছেন, ‘মোট ৪০টা আর্ট ফর্মের ৭৮টা আইটেম আমরা ক্যামেরাবন্দি করেছি। জেলেপাড়ার সং, ছাত পিটুনির গানের মতো বেশ কিছু ফর্ম আমরা খুঁজে পাইনি। আমরা যেগুলোর খোঁজ পেয়েছি, সেগুলো ড্রোন-সহ ৮টা ক্যামেরায় শুট করা হয়েছে।’

    অভিজিৎ জানান, কিছু আর্ট ফর্ম এপার বাংলায় লুপ্ত হয়ে গেলেও বাংলাদেশে এখনও সামান্য হলেও টিকে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘সারিগান’। বাইচ নৌকার মতো যানে সারি দিয়ে বসে চালকরা এই গান গাইতেন। ভার্চুয়াল এই মিউজ়িয়ামের উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, https://bengalfolkperforming.art/ — এই লিঙ্কে ক্লিক করে বাংলার বিলুপ্তপ্রায় ওই ‘ফোক পারফর্মিং আর্টের’ বেশ কয়েকটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা যাবে।
  • Link to this news (এই সময়)