• ডব্লিউ সি বোনার্জির বাড়ি ভেঙে পড়ছে, উঠোনে জঙ্গল
    আজকাল | ২৩ জুন ২০২৪
  • কৌশিক রায়

    ৬৯এ, ডব্লিউ সি বোনার্জি স্ট্রিট, আজাদ হিন্দ বাগ, কলকাতা- ৭০০০০৬। ঠিকানাটা গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ। বিরাট এক প্রাসাদোপম বাড়ি, বর্তমানে যার পলেস্তারা খসে পড়েছে চারদিক থেকে। দাঁত বের করে হাসছে ইট। যেন উপহাস করে বলতে চাইছে, জানো এই বাড়ির ইতিহাস? কে থাকতেন, একদা এখানে কাদের পদধূলি পড়েছে? আজ হয়ত সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। কালের থাবায় বাড়ি হয়েছে জরাজীর্ণ। কিন্তু পেছনে থেকে গেছে ইতিহাস, ঐতিহ্য। কারণ, এই বাড়িটাতেই একসময় বাস করতেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি উমেশ চন্দ্র বোনার্জি। বর্তমানে তাঁর স্মৃতির লেশমাত্র নেই বললেই চলে। টিকে আছে শুধু বাড়িটাই। বাড়ির দরজার সামনে রয়েছে ফলক যাতে লেখা 'সিমলা হাউস। এখানে একসময় বাস করতেন বাংলার এক উজ্জ্বল সন্তান, বিখ্যাত আইনজীবী, জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি প্রয়াত ডব্লিউ সি বোনার্জি’। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে জঙ্গল, ভেঙে পড়া দেওয়াল, খসে পড়া প্লাস্টার, বিরাট দুর্গামণ্ডপ, সারি সারি দরজা যার বেশিরভাগই বর্তমানে বন্ধ। বাড়ির নিচতলাটা একেবারেই বসবাসের অযোগ্য। অন্দরমহল এখন মূল বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে ঠিকানাও। তবে সেখানেও বাস করেন উমেশ চন্দ্র বোনার্জির আত্মীয়রাই। তাঁদের কেউই কথা বলতে রাজি হলেন না।

    মূল বাড়ির ওপরের তলায় থাকেন গোটা বাড়ির একমাত্র বাসিন্দা ভারতী মুখোপাধ্যায়। উমেশ চন্দ্র বোনার্জি সম্পর্কে তাঁর শ্বশুরমশাইয়ের পূর্বপুরুষ। বর্তমানে ভারতীদেবীর বয়স ৭৩ বছর। কথা হল নিচে দাঁড়িয়েই। জানালেন, ‘গুনে দেখেছিলাম গোটা বাড়িতে ৫৪টা ঘর রয়েছে। তবে বেশিরভাগই এখন বসবাসের অযোগ্য। দোতলার কয়েকটা ঘর পরিষ্কার করে সেখানেই থাকি আমি’। ভারতী দেবীর দেখাশোনার জন্য একজন সেবিকা রয়েছেন। তিনিই সারাদিনের সঙ্গী। বাড়ির এই অবস্থা, প্রশাসনের কাছে সংস্কারের আবেদন জানাননি? উত্তর এল, ‘আমার স্বামী জানিয়েছিলেন, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। উনি প্রায় দেড় বছর আগে মারা গেছেন। তারপর থেকে আমি একাই পড়ে আছি। দুর্গামণ্ডপটা এক ডেকরেটার্স কোম্পানি কিছুদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিল তাদের মালপত্র রাখার জন্য। সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসও কোনওদিন খোঁজ নেয়নি’। উমেশ চন্দ্র বোনার্জির স্মৃতিতে বাড়ির পাশেই খোলা হয়েছে সিমলা অ্যাথলেটিক ক্লাব। ভারতী দেবী জানালেন, ‘ক্লাব যখন খোলা হয়েছিল তখন শুনেছিলাম পড়াশোনা হবে, স্কুল হবে। এখন কিছুই দেখতে পাইনা। পুজোর সময় চাঁদা চাইতে আসে। তবে বিপদে আপদে ছেলেগুলোকে পাশে পাই এটাই যা’। ১৮৮৫ সালে কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি হয়েছিলেন উমেশ চন্দ্র বোনার্জি। তাঁর ছোটবেলা কেটেছিল এই বাড়িতেই। বাড়ি ভেঙে পড়লেও যাতে বেহাত না হয়ে যায়, সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন পরিবারের বর্তমান সদস্যরা।
  • Link to this news (আজকাল)