রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: চব্বিশের লোকসভা ভোটে বিজেপির ব্যর্থতা নিয়ে আগেই হতাশা প্রকাশ করেছিল আরএসএস। বিজেপির ভরাডুবির বাখ্যায় এবার আরএসএসের মুখপত্রে স্বীকার করে নেওয়া হল, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য কোনও মুখ বিজেপির নেই।
আরএসএসের (RSS) মুখপত্র ‘স্বস্তিকা’ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চার বছর পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে কোনও গ্রহণযোগ্য, জোরদার মুখ না থাকায় আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি নেতৃত্ব। ২০১৯—এর পর তিনটি নির্বাচনের দুটিতে ল্যাজেগোবরে হতে হয়েছে বিজেপিকে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ২০২৬—এর ভোট এই রাজ্যে বিজেপির (BJP) শেষ অগ্নিপরীক্ষা। চব্বিশের লোকসভা ভোটে বঙ্গ বিজেপির হতাশাজনক ফলাফল হয়েছে। উনিশের লোকসভায় পাওয়া ১৮টি আসন থেকে ৬টি আসন কমে গিয়েছে। মোদি-অমিত শাহরা রাজ্যে প্রচারে এসে ৩০ আসন পাওয়ার টার্গেট দিয়েছিলেন দলের বঙ্গ নেতাদের। কিন্তু বিজেপির যে উচ্চ আশার ফানুস তৈরি হয়েছিল তা চুপসে গিয়েছে ফল প্রকাশের পরই।
হতাশাজনক ফলাফলের পর ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির। পাশাপাশি সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। কারণ সিংহভাগ আসনেই নিজের পছন্দের প্রার্থী করেছিলেন শুভেন্দু। মেদিনীপুর আসন থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে দিলীপ ঘোষকে পাঠিয়েছিলেন তিনিই। নতুন আসনে হারতে হয়েছে দিলীপকে। যা নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা সংঘের ঘরের ছেলে দিলীপ।
আরএসএসের (RSS) মুখপত্র স্বস্তিকায় ১৭ জুনের সংখ্যায় দিলীপের সেই আসন বদলে দেওয়া ও পছন্দের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০২১—এর বিধানসভা ভোটের পর হারিয়ে যাওয়া নেতা থেকে শুরু করে, অচেনা-অজানা আর চমক দেওয়া প্রার্থী চয়নের ফলে বিজেপিকে বড়রকমের খেসারত দিতে হয়েছে।’ এতে স্পষ্ট, প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়টিও পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে আরএসএস। কারও নাম না উল্লেখ থাকলেও এই লেখার মধ্যে নিশানায় যে শুভেন্দু তা মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দলের বিষয়টি নিয়েও চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে সংঘের মুখপত্রের নিবন্ধে। বলা হয়েছে, “মূলত সাংগঠনিক দুর্বলতায় বিজেপি ৬ আসন, আনুমানিক ১.৫ শতাংশ ভোট হারিয়েছে। সঙ্গে জুড়েছে নেতাদের ক্লৈব্য আর দৃষ্টিকটু অন্তর্দলাদলির কারণ। ভোটের পরেও যার রেশ চলছে।”
অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে এভাবেই দলের নেতাদের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে আরএসএসের মুখপত্রে। উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্বল সংগঠন আর মানুষের সঙ্গে যোগ কম ছিল নেতাদের। পরাজয়ের নেপথ্যে নিজেদের দোষ দেখাটাই বিজেপি নেতাদের ভবিষ্যতের পক্ষে মঙ্গল। নিবন্ধে বলা হয়েছে, মমতার যথার্থ কোনও বদলি মুখ বিজেপিতে নেই। তাই প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রীয় নেতারা এই খামতিটা কেন বাঁচিয়ে রাখছেন? বঙ্গ বিজেপিতে যোগ্য ও পাল্টা মুখ দরকার একথা মনে করিয়ে দিয়ে স্বস্তিকায় লেখা হয়েছে, ‘পালটা নেতৃত্ব এলে বিজেপির দুর্বল সংগঠন চাঙ্গা হবে। হেরো, পলাতক আর অযোগ্য প্রার্থীদের বাতিল করে পশ্চিমবঙ্গের দল হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে বিজেপি।’ হতাশা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এসবই কেবলই ‘হবে হয়তো’। আসলটা এখন দেখার।