এই সময়, পানিহাটি: পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে শনিবার প্রায় ছ'মাস পর পানিহাটি পুরসভায় আয়োজিত হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পুরবোর্ডের মিটিং। কিন্তু তাতেও যেন বিতর্ক পিছু ছাড়ল না। স্থানীয় নাগরিক ইস্যুর থেকেও পুরপ্রধান বদলের ইস্যুই মুখ্য হয়ে ওঠে বৈঠকে। এ দিনের মিটিংয়ে স্থানীয় বিধায়ক এবং সাংসদের থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা৷ পুরপ্রধানের ডাকা মিটিংয়ে সাংসদ কী করে সভাপতিত্ব করতে পারেন তা নিয়ে খেদোক্তি প্রকাশ করেছেন খোদ তৃণমূলেরই পুরপ্রধান। পুরপ্রধানের অভিযোগ, তাঁকে কিছুই বলতেই দেওয়া হয়নি মিটিংয়ে। তবে বিকেলে বোর্ড মিটিং হলেও দুপুরে পুর পারিষদ সদস্যদের নিয়ে মিটিং ভেস্তে যায় তিন পুর পারিষদ সদস্যের অনুপস্থিতিতে।পানিহাটির নাগরিক পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বোর্ড মিটিং না হওয়ায় সেই অভিযোগের তালিকা দিনে দিনে বেড়েই চলেছিল। হাল ধরতে আসরে নামেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। গত শনিবার তিনি পানিহাটি পুরসভায় হাজির হয়ে সমস্ত কাউন্সিলাার-সহ পুর ও প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন এবং পুরসভাকে সচল করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে যান। অবিলম্বে বোর্ড মিটিং করা না হলে পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়ে যান মন্ত্রী। শনিবার ফিরহাদের নির্দেশ মেনেই বোর্ড মিটিং ডাকা হয়। পুর নিয়ম অনুযায়ী পুরপ্রধান মলয় রায় মিটিং ডাকেন। তাতে তৃণমূলের ৩৩ জন কাউন্সিলারের মধ্যে ৩০ জন কাউন্সিলার উপস্থিত ছিলেন। হাজির হয়েছিলেন স্থানীয় সাংসদ সৌগত রায় এবং বিধায়ক নির্মল ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন পুরসভার বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরাও।
সাংসদ সৌগত রায়ের সভাপতিত্বে মিটিং শুরু হতেই তিন চার জন কাউন্সিলার পুরপ্রধান মলয় রায়ের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে তাঁকে সরানোর দাবি জানান। তাঁদের থামিয়ে দেন সৌগত রায়৷ সূত্রের খবর, প্রবীণ সাংসদ কাউন্সিলারদের উদ্দেশে বলেন, 'পুরপ্রধান বদল করতে হলে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমে দরকার দলের অনুমোদন। তার পর মহকুমা শাসকের তত্ত্বাবধানে সেটি করতে হয়।' এর পরই ওই কাউন্সিলাররা চুপ করে যান। বিরোধীদের প্রশ্ন, যেখানে বৈঠকের এজেন্ডা উন্নয়ন, সেখানে পুরপ্রধানের প্রতি অনাস্থার ইস্যু উঠবে কেন?
তবে এ দিন পুরমন্ত্রীর দিয়ে যাওয়া নির্দেশের সূত্র ধরে নাগরিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। কেএমডিএ, সুডার অধিকর্তা থেকে শুরু করে পুর পারিষদ সদস্যরা কোথায় রাস্তা, নিকাশি, জঞ্জাল, পানীয় জল, বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে সে সংক্রান্ত রিপোর্ট এবং কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা মিটিংয়ে পুরপ্রধান মলয় রায় কার্যত স্পিকটি নট ছিলেন। পরে তিনি বলেন, 'বোর্ড মিটিংয়ের নাগরিক পরিষেবার এজেন্ডা দূরে সরিয়ে পুরপ্রধান পরিবর্তনের দাবিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আমাকে কোনও বক্তব্যই রাখতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি পুরমন্ত্রীকে জানাব।'
উল্লেখ্য, শুক্রবারই পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন অসীম কুমার বিশ্বাস। তাঁকে নিয়েও চলছে চর্চা। কেন তিনি পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তা নিয়েও চলছে কাটাছেঁড়া।