চাষিরা জানাচ্ছেন, এলাকায় অর্থকারী ফসল হিসাবে পাট চাষ শুরু হলেও করিমপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রচুর পরিমাণে পান চাষ হত। বিশেষ করে শিকারপুর, পিপুলবেড়িয়া, হোগলবেড়িয়া, রহমতপুর এলাকায় রমরমা ছিল পানচাষের। কিন্তু নানা কারণে একদিকে যেমন পাট চাষের বিকল্প হিসেবে কলা, আনাজ থেকে শুরু করে নানা ধরনের চাষ শুরু হয়েছে। তেমনই পান চাষে বারবার ক্ষতির মুখে পড়ে বিকল্প চাষের দিকেই ঝুঁকেছেন অনেকে।
কেচুয়াডাঙা এলাকার পান চাষি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এক সময় গ্রামীণ এলাকায় যাঁর দু বিঘা জমির পান চাষ ছিল তাঁকে গ্রামে বড়লোক চাষি ধরা হত। কেননা পান চাষ বেশ লাভজনক ছিল।’’ তিনি জানান, পান চাষের রমরমা দেখে তিনিও এক বিঘা জমিতে পান চাষ শুরু করেছিলেন। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ করে পানের বরজ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যে সমস্ত পান পচে নষ্ট হয়ে যায়। পুরো টাকাটাই জলে যায়। করিমপুর ১ ব্লকের পান চাষি কল্যাণ সমিতির সহ সম্পাদক সুবোধ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের সমিতির হিসাব অনুযায়ী করিমপুর এলাকায় প্রায় বারোশো হেক্টর জমিতে পান চাষ হত। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে পান চাষ কমতে শুরু করে। এখন আনুমানিক সাড়ে তিন থেকে চারশো হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির কারণে অনেকেই আর এই চাষে আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।’’
দুর্গাপুর গ্রামের পান চাষি হারান স্বর্ণকারের বক্তব্য, আগে রাজ্যের নানা জায়গা ছাড়াও উত্তর ভারতের কানপুর, লখনউ-এর মতো বড় বড় শহরে পান যেত। বড় পান এলাকায় বিক্রি হত। আর ছোট পান চলে যেত বাইরে। এখন পরিবহণ সমস্যার কারণে সে ভাবে আর বাইরে পান যাচ্ছে না। আর পান সংরক্ষণেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে করিমপুরের দুই জায়গায় হিমঘর তৈরি করা হলেও প্রযুক্তিগত কারণে সেখানে পান সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। আর উৎপাদন খরচের পর বিক্রির সময় তেমন দামও পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে এলাকার মানুষ পান চাষে আগ্রহ হারিয়েছে।
করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনা প্রামাণিক বলেন, ‘‘কৃষি, সেচ, উদ্যান পালন বিভাগ-সহ এলাকার অভিজ্ঞ পান চাষি ও পান ব্যবসায়ীদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হবে। পান চাষকে যাতে লাভজনক করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’’