মহিলার পরিবারের পক্ষ থেকে ডোমজুড় থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ ঘটনাটি আপাতত ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ হিসাবে দেখছে। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ প্রথম থেকেই ঘটনাটি লঘু করে দেখাতে চাইছে। এমনকি, ঘটনার রাতে হাওড়া থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে সেখানে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করা হয়। পরে ডোমজুড় থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে প্রৌঢ়ার পরিবার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ার বাড়িতে কয়েকটি গরু আছে। শুক্রবার রাতে একটি গরু মাঠ থেকে না ফেরায় তিনি ও তাঁর এক ছেলে সলপ সেতুর নীচে জঙ্গলের ভিতরে গরুটিকে খুঁজতে গিয়েছিলেন। পরে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে মহিলার ছেলে শর্ট কাট রাস্তা ধরে আগে বাড়ি চলে আসেন। তাঁর মা পিছনে থেকে যান। প্রৌঢ়া বেশ কিছু ক্ষণ পরেও না ফেরায় ছেলে ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো কোনও কাজে আটকে গিয়েছেন। নির্যাতিতার ছেলে শনিবার বলেন, ‘‘প্রায় ৪৫ মিনিট পরেও মা আসেননি দেখে আমি বাড়ির বাইরে যাই। তখনই আমাদের এক আত্মীয় এসে খবর দেন, মা রাস্তার উপরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। আমি দৌড়ে গিয়ে মাকে সেখান থেকে তুলে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার সামনে বলতে অস্বস্তি বোধ করলেও বাড়ির মহিলাদের মা জানান, মুখে কাপড় বাঁধা একটি ছেলে তাঁকে ছুরি দেখিয়ে ঝোপে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে।’’
মহিলার ছেলে জানান, ঘটনার কথা শোনার পরেই তিনি তাঁর মাকে নিজের মোটর ভ্যানে করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলার গোপনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। সেখান থেকে রক্তপাতও হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শে পরিবারের লোকজন হাসপাতালের পাশেই হাওড়া থানায় মহিলাকে নিয়ে যান ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে। কিন্তু পরিবারের দাবি, হাওড়া থানা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। পরে বেশি রাতে পুলিশ নিজেদের গাড়িতে করে ডোমজুড় থানায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করার ব্যবস্থা করে।
শনিবার হাসপাতালে শুয়ে নির্যাতিতা বলেন, ‘‘আমি যখন হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম, তখন একটি অন্ধকার জায়গায় মুখে কাপড় বাঁধা ভারী চেহারার এক যুবক দাঁড়িয়ে ছিল। সে ছুরি বার করে ভয় দেখায়। এর পরে পাশের ঝোপে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।’’ শহর লাগোয়া এলাকায় এই ভাবে এক প্রৌঢ়াকে ধর্ষণ করার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এ দিন ঘটনাস্থলে ভিড় করেন এলাকার বাসিন্দারা।
বিষয়টি নিয়ে প্রথমে পুলিশের মধ্যে তেমন হেলদোল না থাকলেও বেলা ১১টার পরে ঘটনাস্থলে আসে তারা। দুপুরের পরে হাওড়া জেলা হাসপাতালে পুলিশের তরফে মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষার রিকুইজ়িশন জমা দেওয়া হয়। তার পরে সেই পরীক্ষা হয়। এ বিষয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘নির্যাতিতার পরিবার ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করলেও আমরা আপাতত ধর্ষণের চেষ্টার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছি। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিললে ধর্ষণের মামলা রুজু করা হবে। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশের তরফে কাউকে আড়াল করার চেষ্টার প্রশ্নই নেই।’’