• ইসলামপুরে ট্যারান্টুলার কামড়ে হাসপাতালে বধূ
    আনন্দবাজার | ২৩ জুন ২০২৪
  • বাড়ির উঠোনে জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে ট্যারান্টুলা মাকড়সার কামড়ে অসুস্থ হয়ে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক মহিলা। শনিবার ইসলামপুরের মাটিকুণ্ডা-১ পঞ্চায়েতের চৌরিয়া-ডাঙ্গাপাড়া এলাকার ঘটনা। নাসিমা খাতুন নামে ওই মহিলা জানান, বাড়ির উঠোন থেকে জ্বালানি কাঠ তুলছিলেন। ভিজে যাওয়া কিছু কাঠ সরানোর সময়ে তাঁর ডান পায়ে রোমশ মাকড়সাটি কামড়ে ধরে। অপরিচিত মাকড়সাটিকে প্লাস্টিকের বোতলে ভরে হাসপাতালে নিয়ে যান মহিলার স্বামী। ছবি দেখে মাকড়সাটিকে ট্যারান্টুলা বলে শনাক্ত করেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান তথা পতঙ্গবিদ ধীরাজ সাহা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ শর্মা বলেন, ‘‘ট্যারান্টুলার কামড়ে ব্যথা এবং কামড়ের জায়গা লাল হয়ে ওঠে। আক্রান্তের ঘাম হতে পারে।’’ পায়ে সামান্য ব্যথা থাকলেও, নাসিমা আপাতত সুস্থ বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

    নাসিমা বলেন, "যখন মাকড়সাটা কামড়াল তখন তীব্র যন্ত্রণা করছিল। মনে হচ্ছিল, পায়ের তলা থেকে ব্যথা ক্রমশ উপরের দিকে উঠছে। ব্যথা কিছুটা কমছে। তবে একটুক্ষণ পরে পরে ফিরে আসছে। কী কামড়েছে, ডাক্তারকে বোঝাতে হবে ভেবে মাকড়শাটা প্লাস্টিকের বোতলে ভরে রাখা হয়েছিল।’’

    উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান, পতঙ্গবিদ ধীরাজ সাহা বলেন, ‘‘মাকড়সাটি ট্যারান্টুলা জাতের। উত্তরবঙ্গ এবং অসমে এ রকম তিন ধরনের মাকড়সা মেলে। যে মাকড়সাটি কামড়েছে, সেটি ‘চিলোব্রেকিস খাসিয়ানসিস’ অথবা ‘চিলোব্রেকিস হিমালয়ানসিস’ হবে। ছবি দেখে মনে হচ্ছে হিমালয়ানসিস হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’ তিনি জানান, উত্তরবঙ্গ, অসম, মেঘালয়ের বিভিন্ন এলাকায় আর এক ধরনের ট্যারান্টুলা মেলে। সেটি ‘পয়েসিলফেরিয়া মিরান্ডা’। এ ধরনের মাকড়শা গর্তে, গভীর ঝোপ, জঙ্গলে সাধারণত থাকে। প্রজননের সময়ে অথবা আশ্রয়স্থল নষ্ট হলে খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসে। বৃষ্টিতে গর্তে জল ঢুকে যাওয়ায় সম্ভবত বেরিয়ে ভেজা জ্বালানি কাঠের স্তূপে আশ্রয় নিয়েছিল। এ ধরনের মাকড়সা ছোট ইঁদুর, পাখি খেয়ে ফেলে। অনেকগুলো মাকড়শা মিলে বসতি (কলোনি) গড়ে তোলে। তাই ওই এলাকায় আরও থাকতে পারে। তাঁর সংযোজন, ‘‘মাকড়শাটা কতটা কামড় দিয়েছে তার উপরে ব্যথা নির্ভর করবে। অ্যালার্জি ধরনের সমস্যা হতে পারে। তবে প্রাণনাশের ভয় নেই। এদের বিষ রক্তে বা মাংসে ছড়ায়, স্নায়ুর উপরে প্রভাব নেই। ব্যথা দু’-তিন দিন থাকতে পারে। উদ্বেগের কারণ নেই।’’

    মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘ট্যারান্টুলা বড় এব‌ং লোমশ মাকড়সা। এর কামড়ে ব্যথা এবং কামড়ের জায়গা লাল হয়ে ওঠে, সেখান থেকে ঘাম হতে পারে। অ্যান্টি-হিস্টামিনিক, ব্যথা কমানোর ওষুধ, ক্রিম দিলেই আক্রান্ত সেরে উঠবেন।’’

    ট্যারান্টুলাটি আপাতত ইসলামপুর হাসপাতালেই রাখা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের সুপার সুরত সিংহ।মাটিকুণ্ডা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান চায়না মোদক বলেন, ‘‘যদি এ ধরনের মাকড়শা ওই এলাকায় থেকে থাকে, তা হলে তাদের সরানোর জন্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে স্প্রে বা কী করণীয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)