• এ বার টাকা দিন, নির্মলাকে চন্দ্রিমা
    আনন্দবাজার | ২৩ জুন ২০২৪
  • লোকসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মোদী সরকারের কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’-কে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র করেছিলেন। ভোটের পরে আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সামনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দাবি তুললেন, এ বার রাজ্যের পাওনা বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হোক। রাজ্যের হিসাব মতো, কেন্দ্রের থেকে বকেয়ার পরিমাণ এক লক্ষ ৭১ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

    আজ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সরকার চলছে। তার জন্য পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পক্ষপাতিত্ব হবে না বলেই রাজ্য সরকারের আশা। লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের অন্যতম অস্ত্র ছিল, মোদী সরকার রাজ্যের গরিব মানুষের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে আর তাতে মদত আছে রাজ্য বিজেপির নেতাদেরও— এই অভিযোগ। ভোটে বিজেপিকে তার খেসারতও দিতে হয়েছে। বিজেপির বাংলার সাংসদ সংখ্যা ১৮ থেকে ১২-তে নেমেছে।

    আজ বাজেট নিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সেই সুর বজায় রেখেই বলেন, একশো দিনের কাজের প্রকল্প বা এমজিএনআরইজিএ এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো খাতে রাজ্যের টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন, সর্বশিক্ষা অভিযান, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের মতো প্রকল্পে রাজ্যের টাকা বকেয়া রয়েছে। এই সব প্রকল্প গরিব মানুষের জন্য তৈরি। এখানে কেন্দ্র যেমন টাকা দেয়, রাজ্যও টাকা দেয়। কিন্তু কেন্দ্র তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে টাকা আটকে রেখেছে। ইয়াস, রেমালের মতো ঘূর্ণিঝড়ের পরে রাজ্যের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ত্রাণ তহবিল থেকে বরাদ্দ হয়নি। সব মিলিয়ে রাজ্যের বকেয়া এক লক্ষ ৭১ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

    পরে চন্দ্রিমা বলেন, “একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রাখায় রাজ্য ৫৯ লক্ষ শ্রমিককে টাকা দিয়েছে। এ ভাবে তো চলতে পারে না। আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রক দেখে যাওয়ার পরে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার বাড়ি অনুমোদন হল। কিন্তু মানুষের টাকা আটকে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ১১ কোটি মানুষের রাজ্য। বড় রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই ভাববেন।”

    জুলাই মাসে নির্মলা সীতারামন পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবেন। তার প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে আজ রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। তার পরে জিএসটি পরিষদের বৈঠকও ছিল। ভোটের পরে এই প্রথম কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক হল। বৈঠকে গোয়া-সহ বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীরা তাঁদের রাজ্যে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার কেমন কাজ করছে, তার খতিয়ান দেন। কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই সঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় থাকার ‘সুফল’ তুলে ধরেন তাঁরা।

    সেই সূত্র ধরে বৈঠকের একেবারে শেষ পর্বে পশ্চিমবঙ্গের সুযোগ মেলায় চন্দ্রিমা বলেন, বাংলায় ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সরকার চলছে। তার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই বাছবিচার করবেন না। আর ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সত্ত্বেও রাজ্যের জিডিপি বা জিএসডিপি এখন ১৭ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। ২০১১ সালে যা ছিল মাত্র চার লক্ষ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার যখন অর্থ বরাদ্দ করবে, তখন যেন রাজ্যে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ বা ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ না দেখা হয়। কাজের ভিত্তিতে টাকা বরাদ্দ হয়। শুধু টাকা বরাদ্দ করলেই হবে না, তা যেন ঠিকমতো মঞ্জুর হয়, তা-ও সীতারামনকে দেখার অনুরোধ করেন চন্দ্রিমা। তিনি বলেন, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মতো পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য খাতে ৮৫০ কোটি টাকা পায়নি। অথচ কলকাতায় পূর্ব ভারত ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের চিকিৎসা হচ্ছে। উত্তর-পূর্বের ছেলেমেয়েরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালে চাকরি করছে। অঙ্গনওয়াড়ি, সমগ্র শিক্ষা অভিযান, পোষণের মতো প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার কর্মী নিয়োগ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সেই ভারও পুরোপুরি রাজ্যকে নিতে হচ্ছে।

    কোভিডের ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির পরিকাঠামোয় লগ্নির জন্য ৫০ বছরের মেয়াদে সুদমুক্ত ঋণ দিচ্ছে। চলতি বছরে এই খাতে রাজ্যগুলিকে ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু এই অর্থের একাংশের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের শর্ত রয়েছে। আজ অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও দাবি তুলেছে, শর্তহীন ঋণের অংশ বাড়াতে হবে। লাল ফিতের ফাঁস কাটাতে হবে। চন্দ্রিমা বলেন, “প্রথম কিস্তির টাকা খরচের পরে শংসাপত্র দেওয়া হলেও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আটকে রয়েছে। কারণ নাকি কোনও একটা রঙের কোড মিলছে না! রঙের কোডের জন্য তো উন্নয়নের কাজ থেমে থাকতে পারে না।” তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যে সেস, সারচার্জ আদায় করে, তা রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ করে নেয় না। এই অর্থও রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

    আজ জিএসটি পরিষদের বৈঠকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে জট কেটেছে। সীতারামনের অভিযোগ ছিল, এজি-র শংসাপত্র না মেলায় রাজ্যের ক্ষতিপূরণের টাকা মঞ্জুর করা যাচ্ছে না। এ বার অর্থ মন্ত্রকের আমলারা মেনেছেন যে, ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বঙ্গের থেকে যাবতীয় শংসাপত্র তাঁরা পেয়ে গিয়েছেন। অন্যান্য বিষয়ে রাজ্যের অভিযোগের কোনও জবাব না দিলেও বৈঠকে সীতারামন বঙ্গের সব কথাই ধৈর্য ধরে শুনেছেন। পরে চন্দ্রিমা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের উপরে যে ভাবে আর্থিক বোঝা চাপছে, তা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ভাববেন বলে আশা করছি।”

  • Link to this news (আনন্দবাজার)