এ বার লোকসভা ভোটে দেবকে এক লাখি লিড দেওয়া কেশপুর বিধানসভার জগন্নাথপুরে শুক্রবার রাতে তৃণমূলের এই বিজয় উৎসব হয়েছে। ভোটের দিন কেশপুরে দফায় দফায় তৃণমূলের অবরোধে আটকেছিলেন হিরণ। জগন্নাথপুরের খেড়ুয়াবালিতেও দীর্ঘক্ষণ আটকাতে হয় ঘাটালের বিজেপি প্রার্থীকে।
সে দিনের অবরোধে যাঁরা শামিল হয়েছিলেন, শুক্রবার বিজয় উৎসবের মঞ্চে তাঁদের প্রত্যেককে পুষ্পস্তবক দিয়ে, উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ বরদোলুই বলছেন, ‘‘দলের বুথ সভাপতিদের সঙ্গে সক্রিয় কর্মীদেরও সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আমরা যে এখানে বিপুল ভোটে এগিয়ে, তার কারণ আমাদের বুথ কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম। তাঁদের উৎসাহিত করতেই এই আয়োজন।’’ বিজয় উৎসব উপলক্ষে নৈশভোজেরও আয়োজন ছিল। মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা বললেন, ‘‘যা গরম! মাংস করা হয়নি। দু’পিস করে মাছ দেওয়া হয়েছে। সবাই ভরপেট খেয়েছে।’’
মঞ্চে সংবর্ধিত হয়েছেন খেড়ুয়াবালির রবি দোলুই, চন্দনা আড়িরা। তাঁদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মঞ্চে সংবর্ধিত হয়ে দারুন লাগছে।’’ জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষের খোঁচা, ‘‘এ তো অপরাধীদের উৎসাহ দেওয়া। এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি।’’
গত ২৫ মে ঘাটাল লোকসভায় ভোটের দিন কেশপুরের নানা প্রান্তে আটকেছিলেন হিরণ। অভিযোগ, এক সময়ে তৃণমূলের লোকজন লাঠিসোটা হাতে হিরণকে তাড়াও করে। সে দিন দেবকে বিঁধে বিজেপির অভিনেতা প্রার্থী বলেছিলেন, ‘‘কেশপুরে নির্বাচনের নামে পাগলু ড্যান্স করেছে তৃণমূলের বাহিনী।’’ এ দিন অবশ্য চেষ্টা করেও হিরণের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে কেশপুর নিয়ে ভোট লুটের অভিযোগ থেকে বিজেপি এখনও সরে আসেনি। পরিসংখ্যান বলছে, কেশপুরে ৩০টিরও বেশি বুথে বিজেপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১ থেকে ৯টি! একটিও ভোট পাননি হিরণ— এমন বুথও আছে। কেশপুরে মোট ২৮২টি বুথ। ভোটের দিনে শতাধিক বুথে এজেন্টও ছিল না বিজেপি-র।
ঘাটালের ফল নিয়ে বিজেপি এর মধ্যেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে। ক’দিন আগে মেদিনীপুরে এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলে গিয়েছেন, ‘‘হিরণ চট্টোপাধ্যায় কেস করছেন। কেশপুরের ওয়েব ক্যামেরাগুলি ফরেনসিক ল্যাবে গেলে বোঝা যাবে, উনি (দেব) ছাপ্পা মেরে সাংসদ হয়েছেন।’’ মন্ত্রী তথা কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহার অবশ্য দাবি, ‘‘সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। দেব কেশপুরের ঘরের ছেলে। ফলে, কেশপুর থেকে লক্ষাধিক ভোটে জিতবে, এটাই তো প্রত্যাশিত।’’ তৃণমূলের একাংশের দাবি, পথ আটকে বিক্ষোভ তো গণতান্ত্রিক ভাবে ক্ষোভের প্রকাশ। এর সঙ্গে ভোট লুটের সম্পর্ক নেই।