বিদ্যাপতি সেতুর সংস্কার অনেক আগেই করানো উচিত ছিল বলে মানছেন কেএমডিএ কর্তারা। কিন্তু, সেতুর নীচে বিরাট বাজার থাকায় পরিকল্পনা সত্ত্বেও বার বার পিছিয়ে আসতে হয়েছিল। বর্তমানে ওই বাজারে রয়েছে প্রায় হাজারখানেক দোকান। সংস্কার শুরু হলে সরাতে হবে সেই সব দোকান। কিন্তু, সংস্কার চলাকালীন দীর্ঘ সময় দোকানগুলি বন্ধ থাকলে সমস্যায় পড়বেন দোকান মালিক ও কর্মীরা। সেই কারণেই এত দিন সংস্কারের কাজ শুরু করা যায়নি। তবে বিদ্যাপতি সেতুর পরিস্থিতি বর্তমানে যা, তাতে সংস্কার কাজ শুরু করতেই হবে দ্রুততার সঙ্গে। না হলে অচিরেই ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যে ভাবে মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়েছিল, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলেই আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের। মাঝেরহাট সেতুর ক্ষেত্রে সে ভাবে প্রাণহানি না ঘটলেও, বিদ্যাপতি সেতুতে কোনও বিপর্যয় ঘটলে প্রাণহানি ঘটবে অনেক। কারণ, বাজারের মধ্যেকার রাস্তাকে বহু মানুষ যাতায়াতের পথ হিসেবে ব্যবহার করেন। তা ছাড়া শিয়ালদহ স্টেশনে যাতায়াতকারী বহু মানুষ ওই সেতুর নীচ দিয়ে যাতায়াত করেন। তাই সেতু সংস্কারের ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ প্রশাসন।
আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, ৯ কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ হবে সংস্কার কাজে। সেতুর প্রতিটি পিলারের গায়ে লোহার খাঁচা দিয়ে কংক্রিট ওয়াল কভার করা হবে। এতে পিলারগুলি আরও শক্তপোক্ত হবে। বেশ কিছু অংশ ভেঙে ঠিক করতে হবে। সেতুর চারটি পথের রেলিং নতুন করে করা হবে। প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ করে পিচের আস্তরণ তুলে নতুন রাস্তা করা হবে। মাঝেরহাট সেতুর বিপর্যয় রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসনকে। তার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উড়ালপুল, সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা শুরু হয়। ইতিমধ্যে টালা সেতু ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। চিৎপুর ও কালীঘাট সেতু ভাঙার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কলকাতার বুকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেতুগুলির মধ্যে বিদ্যাপতি সেতুর নাম তালিকার উপরে। এই সেতু ভেঙে পড়লে যে মধ্য ও উত্তর কলকাতার যানবাহন চলাচল ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা-ই নয়, জনজীবনও বিপর্যস্ত হবে বলে মনে করছে প্রশাসন। তাই আপাতত দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু করার পক্ষপাতী তারা। তাই সেতুর স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে এ বার তোড়জোড় শুরু করেছে কেএমডিএ। সেই কাজের জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পরিদর্শনের পর প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা হবে বিদ্যাপতি সেতুর নীচে থাকা দোকানগুলি ধাপে ধাপে সরিয়ে কাজ করা যায় কি না। তবে দোকানদারদের একাংশের প্রশ্ন, “আমাদের নিরাপত্তার কারণে সেই কাজ করতে দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু, কোথায় যাব?”