অম্বুবাচী উপলক্ষে শিকার, প্রায় ২৫০ বন্যপ্রাণীর দেহ উদ্ধার, ধৃত ৩০
এই সময় | ২৪ জুন ২০২৪
অম্বুবাচীতে বন্যপ্রাণী শিকার করতে গিয়ে বনদফতরের হাতে পাকড়াও ৩০ জন শিকারি৷ উদ্ধার প্রায় ২৫০টি মৃত প্রাণীর দেহ। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে। শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চলে বন দফতরের। তাতেই ওই ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একটি ট্রাক্টর, দু'টি মোটর ভ্যান ও একটি মোটরবাইক।বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে আদিবাসীদের শিকার উৎসব হয়৷ প্রতিবছর কেতুগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বীরভূম জেলা থেকে প্রচুর শিকারি আসে। তারা মূলত পাখি সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী শিকার করে নিয়ে যায়৷ এবার তাই তিনদিন আগে থেকেই নজর রাখছিল বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা হিউম্যান অ্যাণ্ড এনভায়ারনমেন্ট অ্যালায়েন্স লিগ বা 'হিল' নামক একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন৷ এদিন কেতুগ্রামের কোমরপুর ও গোপালপুর গ্রামের আশেপাশেই বীরভূম থেকে তির, ধনুক, গুলতি সহ নানা শিকারের সরঞ্জাম নিয়ে বেশ কয়েকটি দল আসে৷ মোটর ভ্যান, ট্রাক্টর ও বাইক নিয়ে আসে তারা৷ সারাদিন ধরে চলে শিকার পর্ব৷ বিকেলের দিকে বনকর্তারা ও 'হিল'-এর সদস্যরা কেতুগ্রাম থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালান৷ তারপরেই রাতের দিকে ৩০ জন শিকারিকে পাকড়াও করা হয়।
ধৃতদের ঝুলি দেখে রীতিমতো চোখ কপালে ওঠে বনদফতরের ৷ মৃত বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে ১২ রকমের গোসাপ, বনবিড়াল, কাঠঠোকরা পাখি, বেজি, বক, শালিক, তাবুক সহ নানা প্রজাতির পাখি। 'হিল'-এর সদস্যরা জানান, মৃত বন্যপ্রাণীর সংখ্যা প্রায় ২০০ থেকে ২৫০। রাতেই কেতুগ্রাম থানায় যান কাটোয়া রেঞ্জের রেঞ্জার শিবপ্রসাদ সিনহা। তিনি বলেন, 'মূলত বাদনা পরবের পর আদিবাসীরা জঙ্গল এলাকায় শিকারে বের হন। এই সময় তাঁরা জঙ্গল থেকে প্রাণী শিকার করে নিয়ে আসেন। প্রাচীন এই রীতিকে বজায় রাখতেই প্রতিবছর আউশগ্রামের ভালকি, ১১ মাইল, ডাঙ্গাপাড়া পাথরকুচি, ছোড়া, ন'পাড়া, মঙ্গককোট, কেতুগ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে আদিবাসীরা শিকারে আসেন। পাশ্ববর্তী বীরভূম জেলা থেকেও শিকারে আসেন আদিবাসীরা। তাঁরা সুসজ্জিত হয়ে আসেন। হাতে লাঠি, বর্শা, ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বন্যপ্রাণী শিকার করেন। এই শিকারি দলের সঙ্গে আবার শিকারি কুকুরও থাকে। তারপর তাঁরা তীর ধনুক, বর্শা ছুঁড়ে শিকার করেন।'
রেঞ্জার আরও বলেন, 'বনদফতর শিকার উৎসবকে কেন্দ্র করে বন্যপ্রাণী শিকার রুখতে ধারাবাহিক প্রচার চালায়। শুধু তাই নয়, আদিবাসী মহল্লাগুলিতে তাঁদের ভাষাতেই প্রচার চালান হয়। তবুও শিকার ঠেকানো যাচ্ছে না।'