লোক আদালতে একদিনের ‘বিচারক’ মৌসুমী, নতুন অভিজ্ঞতা নার্সিং ছাত্রীর
এই সময় | ২৪ জুন ২০২৪
তখন তাঁর বয়স মাত্র পাঁচ। মা-বাবা ছোট্ট শিশুটিকে ছেড়ে দিয়ে যায় রাস্তায়। উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর বড় হয়ে ওঠে হোমে। ভবিষ্যতে ভালো নার্স হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে মৌসুমী মুর্মুর। আজ, রবিবার একটি বিশেষ দিনের সাক্ষী থাকলেন। লোক আদালতে একদিনের জন্য ‘বিচারক’ হওয়ার সুযোগ পেলেন তিনি।মৌসুমী মুর্মু পাঁচ বছর বয়স থেকেই হোমেই জীবন কাটাচ্ছেন বর্তমানে একুশ বছর বয়সী নার্সিং প্রথম বর্ষের ছাত্রী এই মৌসুমী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জেলা আদালতে DLSA-এর তরফে বসেছিল দ্বিতীয় লোক আদালত। লোক আদালতে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া স্থানীয় মানুষজন এসেছিলেন নিজের মামলা নিষ্পত্তি করতে। এই দিন প্রায় ১৪ হাজার মামলা মোকদ্দমা উপস্থাপিত হয় এই লোক আদালতে। আর তাতেই বিচারকের ভূমিকায় দেখা গেল এই হোম বালিকা মৌসুমী মূর্মুকে।
পাঁচ বছর বয়সে মৌসুমীকে মা-বাবা কৃষ্ণনগরের একটি পরিত্যাক্ত জায়গায় ফেলে দিয়ে আসে বলে অভিযোগ। এরপর ওখানকার পুলিশ মারফত মৌসুমীর ঠাঁই হয় হোমে। দীর্ঘ সাত বছর হোমে থাকা এবং লড়াই করার পর ১২ বছর যখন তার বয়স তখন সে মেদিনীপুর হোমে চলে আসে বদলি হয়ে। এরপর মেদিনীপুর হোমে পড়াশোনার পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকের পর নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়। এরই মধ্যে অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত এই মৌসুমী মুর্মু হঠাৎই লেটার পান মেদিনীপুর জেলা আদালত থেকে।
যেখানে তাঁর এই DLSA এর লোক আদালতে ডাক পড়ে ‘বিচারক’ হিসেবে। প্রথমে চিঠিটি পেয়ে কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়ে এই মৌসুমী। কিন্তু পরে আদালতের আইনজীবীদের তত্ত্বাবধানে মৌসুমী চলে আসে মেদিনীপুর আদালতে। এদিন সকাল থেকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত শতাধিক কেস তিনি নিজের চোখে দেখেন, অভাব অভিযোগ শুনে দিলেন পরামর্শ। এরই সঙ্গে সমাধান করলেন দীর্ঘদিন চলে আসা মামলা মোকদ্দমার। এইদিন মৌসুমী মূলত SC-ST Atrocities Act-এর অধীন স্পেশ্যাল কোর্টে বসে গাড়ি দুর্ঘটনার বীমা সংক্রান্ত মামলাগুলো খতিয়ে দেখেন।
মৌসুমীর ইচ্ছে বড় হয়ে নার্স হওয়ার। তবে অবসর সময়ে মৌসুমী গান শুনতে ভালোবাসে, পড়তে ভালোবাসে যে কোন গল্পের বই। তবে মেদিনীপুর আদালতে এসে যে এরম একটা দিনের অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে পারবেন, সে কথা কোনওদিন কল্পনাতেও ভাবতে পারেননি মৌসুমী।