প্রিয়া বলেন, বর্তমানে বাবা বাড়িতেই শয্যাশায়ী। আমরা বাড়িতে পাঁচজন, আমরা তিন বোন ও বাবা মা। এক বোন নার্সিং নিয়ে পড়ছে ব্যাঙ্গালোরে। আরেক বোন কোচবিহারে আইন কলেজে পড়াশোনা করছে। বাবার এই দুর্ঘটনার পর, ভীষণভাবে চিন্তায় রয়েছি , বাবার চিকিৎসার খরচের পাশাপাশি দুই বোনের পড়াশোনার খরচ কি করে আসবে তা ভেবেই কূল কিনারা পাচ্ছি না। টোটো বোঝাই করে নিজেই টোটো চালিয়ে দুটি বিস্কুটের লাইন। সপ্তাহে দুদিন হাটে গিয়ে বিস্কুটের দোকান করা। দোকানে দোকানে বিস্কুট রুটি ইত্যাদি নিজেই পৌঁছে দেওয়া। বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক বিল সমস্ত কাজেই দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন শিক্ষিত প্রিয়া দেবী। বাবার দুর্ঘটনার পর আর কোন কিছু না ভেবে নিজের পড়াশোনা সেখানেই ইতি টেনে নিয়ে বাবার সেই টোটো করে রুটি বিস্কুটের ব্যবসাটা কাধে তুলে নেন। প্রায় চার মাস ধরে করছি। কোন সমস্যা হয় না। দিব্যি করে যাচ্ছি।
বোন লিজা চক্রবর্তী বলেন, আমার বড়দি বাবার দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের ভাই বা দাদা নেই। দাদার কাজই দিদি করে চলেছেন। যদি কোনওদিন প্রতিষ্ঠিত হতে পারি সর্বপ্রথম দিদির পাশে দাঁড়াবো । বোন হয়ে যতটা পারি দিদিকে সাহায্য করবো। প্রিয়া ছোট থেকেই খুব পরিশ্রমী, তিন বোন কোন ভাই বা দাদা নেই, ফলে ওরা লড়াইটা আগে থেকেই জানে। আমরা ওকে মেয়ে মনে করি না আমরা ওকে ছেলেই মনে করি। তাই ও আজকে এই এত বড় একটি চ্যালেঞ্জ নিয়েছে বাবার চিকিৎসার পাশাপাশি কিভাবে সংসারটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এবং বোনদের যেন পড়াশোনা বন্ধ না হয়। আমরা সকল পাড়া-প্রতিবেশীরা খুবই গর্বিত এই বোনটির জন্য।
এই বিষয়ে ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শিবশঙ্কর দত্ত বলেন, মেয়েটির এহেনও কাজে সাধুবাদ জানাই। পরিবারের সাথে ইতিমধ্যে যোগাযোগ হয়েছে সব রকম ভাবেই পরিবারটি পাশে থাকার আশ্বাস শিব শংকর বাবুর। সমস্ত বিষয়েই খোঁজখবর করে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
অপরদিকে ধর্মপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা রেনুকা ডাকুয়া বলেন খবর পাওয়ার পর পরিবারটির কাছে যাওয়া হয়েছিল পাওয়া যায়নি। আবার গিয়ে খোঁজখবর করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়,তা শেখা উচিত ময়নাগুড়ির এই প্রিয়া দেবীর কাছ থেকে।