স্বপ্নের ৪ লেন পেতে রোজ দুঃস্বপ্নের যাত্রা, বেহাল পথে দুর্ভোগ রাজারহাটে
এই সময় | ২৪ জুন ২০২৪
এই সময়, রাজারহাট: কলেজ যাবেন বলে সকালবেলা স্কুটি নিয়ে বেরিয়েছিলেন কাশীনাথপুরের একটি আবাসনের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা পাল। পাথরঘাটা-রাজারহাট মেন রোড হয়ে কিছুটা এগোতেই রাস্তার ওপর পড়লেন আছাড় খেয়ে। গোটা রাস্তা জুড়েই জলকাদা।ওমরহাটির বাসিন্দা আলমগীর মোল্লা সাইকেলে করে সব্জি নিয়ে বিষ্ণুপুর যাচ্ছিলেন। কালিকাপুরের কাছে রাস্তার ওপর পড়ে থাকা বড় পাথরে পিছলে পড়লেন তিনি। কাদায় নষ্ট হয়ে গেল সমস্ত সব্জি, নিজেও জখম হলেন।দুটো কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নিত্যদিন এমনটা ঘটছে রাজারহাট-পাথরঘাটা রোডে। মাত্র সাড়ে ৬ কিলোমিটার পথ যেতে লেগে যাচ্ছে আধ ঘণ্টাও বেশি। প্রাক বর্ষায় রাস্তার বড় বড় গর্তে জল জমেছে। প্রশাসন ও পূর্ত দপ্তরের কর্তারা রাস্তা নিয়ে অভিযোগ শুনছেন না, দাবি বাসিন্দাদের একাংশের। বারাসত হাইওয়ে ডিভিশনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, বিষ্ণুপুর বটতলা থেকে পাথরঘাটা বাজার পর্যন্ত বর্তমান রাস্তাটিকে চার লেন করা হচ্ছে।
আর সেটা করতে গিয়েই যত সমস্যা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নিউ টাউন লাগোয়া রাজারহাটের বিষ্ণুপুর-পাথরঘাটা সাড়ে ছ’কিলোমিটার রোডের বিপুল সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১৭ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ করেছে পূর্ত বিভাগ। কয়েক মাস আগে থেকে এই সংস্কারের কাজ শুরু হলেও তা ধীরগতিতে হওয়ায় নিত্যযাত্রীরা সমস্যায় পড়ছেন, অভিযোগ এমনই।
পিডব্লিউডি সূত্রের খবর, রাস্তাটি চার লেনের হবে। মাঝখানে থাকবে ডিভাইডার। তাই জায়গা বের করতে রাস্তার দু’দিকে একাধিক গাছ কাটা হচ্ছে, সরছে অস্থায়ী ঝুপড়ি। ইলেকট্রিক খুঁটি উপড়ে চালু রয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড কেব্ল পাতার কাজ। রাস্তায় কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজও হচ্ছে। এতগুলো কাজ চলার ফলেই যাতায়াতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাথরঘাটা এবং বিষ্ণুপুর দু’নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ছাপনা, গাঁড়াগড়ি, কাশীনাথপুর, কালিকাপুর, মহম্মদপুর, জামালপাড়া, বসিনা অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।
ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের বক্তব্য, দীর্ঘ কয়েক বছর পরে পাথরঘাটা-বিষ্ণুপুরের রাস্তা চওড়া হচ্ছে বলে তাঁরা খুশি ঠিকই, তবে দুর্ভোগও প্রবল পোহাতে হচ্ছে। ওই পথেই অটো এবং বাস চলাচল করে পাথরঘাটা থেকে রাজারহাট পর্যন্ত। স্থানীয় অটোচালক মানিক মণ্ডল বলছেন, ‘রাস্তার কিছুটা অংশ সারিয়ে বাকিটা ভাঙতে পারত পূর্ত দপ্তর। গোটা পথটাই একসঙ্গে খুঁড়ে ফেলায় বিপদ বেড়েছে নিত্যযাত্রীদের। রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর করের বক্তব্য, এলাকার মানুষের অনেকদিনের দাবি, নিউ টাউনের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ চাই। রাস্তাটা হয়ে গেলে সাপুরজি, টাটা মেডিকেল, ইকোস্পেস, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গ্রামীণ রাজারহাটের যোগাযোগ সহজতর হবে। ভাঙড়-হাড়োয়ার মানুষও উপকৃত হবেন।
কবে মিটবে সমস্যা? পূর্ত দপ্তরের এক ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, ডাবল লেনের রাস্তাকে চার লেন করা হচ্ছে। ফলে রাস্তার পাশ থেকে প্রচুর গাছপালা, ইলেকট্রিক পোল, অবৈধ দোকান সরাতে হচ্ছে। জল নিকাশির জন্য কালভার্ট ড্রেন তৈরি করতে হচ্ছে। পুরোটা ঠিক হতে বছরখানেকের ওপর সময় লাগবে।