• বুজেছে অনেক জলাশয়, বাকি বাঁচাতে জিও ট্যাগ
    এই সময় | ২৪ জুন ২০২৪
  • বিধাননগরে জলাশয় কত, জানতে শুরু হচ্ছে সমীক্ষা। সেই কাজ করতে গিয়ে লোকেশন ম্যাপিং প্রযুক্তির সাহায্যে জিও ট্যাগ করা হবে সল্টলেক, কেষ্টপুর, রাজারহাট, বাগুইআটি এলাকার জলাশয়গুলির। এতে ভবিষ্যতে অ্যাপের মাধ্যমে আধিকারিকরা দেখে নেবেন, কোথায় জলাশয় রয়েছে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে আগামী দিনে জলাশয় ভরাট আটকানো সহজ হবে বলে মনে করছেন বিধাননগর পুরনিগমের কর্তারা।মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) রহিমা বিবির বক্তব্য, ‘অনেক জায়গা থেকেই জলাশয় ভরাটের খবর আমাদের কাছে আসছে। ফলে, জলাভূমি কী অবস্থায় রয়েছে, সংখ্যায় কত— জানাটা জরুরি।’ তাদের আওতাধীন এলাকায় জলাশয়ের সংখ্যা কত, সে বিষয়ে কোনও তথ্য এখন পুরনিগমের হাতে নেই।

    জলাশয় সমীক্ষার জন্য পরিবেশ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি পৃথক টিম তৈরি হয়েছে, যাঁরা কাউন্সিলার এবং ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সাহায্যে ঘুরে-ঘুরে কাজ করবেন। সমীক্ষা শেষে জলাশয়ের তালিকা পুরনিগমের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপে নথিবদ্ধ করা হবে। জলাশয়ের আয়তন, অবস্থান, বর্তমান ছবি— সবই থাকবে ওই তালিকায়। জিও ট্যাগিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরনিগমের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের আধিকারিকদের।

    মাস তিনেকের মধ্যেই সমীক্ষা এবং ট্যাগিংয়ের কাজ শেষ করার টার্গেট রাখা হয়েছে। পুরনিগমের পরিবেশ বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘সমীক্ষায় যে সব জলাশয়গুলিতে কচুরিপানা বা আর্বজনা জমে থাকার কথা জানা যাবে, সেগুলি সংস্কার করা হবে। পুকুরের চারপাশ সাজানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।’

    কেন সমীক্ষার সিদ্ধান্ত?

    মাঝেমধ্যেই পুরনিগমের কন্ট্রোল রুমে জলাশয় ভরাটের অভিযোগ আসছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গেলেও ভরাট প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারেন না পুর কর্তারা। কারণ, ওই জলাজমি বাস্তু জমি বলে দাবি করে সেই সংক্রান্ত কাগজ দেখিয়ে দেন কেউ। এই সমস্যা ঠেকাতেই জিও ট্যাগিং জরুরি বলে দাবি পুর কর্তাদের। ঘটনা হলো, ২০১৫ সালের আগে বিধাননগর যখন পুরসভা ছিল, তখন সেখানকার ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৩টি ওয়ার্ডে প্রাকৃতিক জলাশয় ছিল।

    ২০১৫ সালে পুরনিগম হওয়ার পরে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা মিশে বিধাননগরের ওয়ার্ড বেড়ে হয় ৪১। সেই অতিরিক্ত এলাকার জলাশয়ের তথ্য পূর্ত দপ্তরের ম্যাপে থাকলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে এখন কেষ্টপুর, নয়াবাদ, দশদ্রোণ, বাগুইআটি, সুকান্তনগর থেকে জলা বোজানোর অজস্র অভিযোগ এলেও আইনি পথে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন পুর আধিকারিকরা।

    কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বছর পাঁচেক আগেও বঙ্গে পুর এলাকায় জলাভূমি ছিল ৩৮,৫২০। বর্তমানে সংখ্যাটা কমে ২৭,৮২৬-এ দাঁড়িয়েছে। ওই পরিসংখ্যান সামনে আসার পরেই নতুন করে যাতে জলাশয় ভরাট না হয়, সেজন্য পুরসভা-পুরনিগমকে পদক্ষেপ করার কথা বলেছে রাজ্য পুর দপ্তর।

    প্রসঙ্গে পরিবেশ বিজ্ঞানী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘জলাশয়ের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। অনেক জলজ প্রাণী, উদ্ভিদের জীবনচক্র আবর্তিত হয় এই জলাভূমিকে কেন্দ্র করে।’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘শুধু সমীক্ষা করলেই হবে না। বাস্তবে ভরাট রুখতে পদক্ষেপ করতে হবে’।

    জিও ট্যাগিং মানচিত্রে থাকবে, জলাভূমির বাউন্ডারি, নিকাশি খালের তথ্য, আশপাশের ল্যান্ডমার্ক, জলাশয়ের বর্তমান অবস্থা।
  • Link to this news (এই সময়)