ব্যাঙ্ক কর্তাদের 'ইগো' নিয়ে উষ্মা কোর্টের, ৩ লাখ ফাইন
এই সময় | ২৪ জুন ২০২৪
শহরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কর্মরত বিশেষ ভাবে সক্ষম এক অফিসারের প্রতি কর্তৃপক্ষের চরম অমানবিকতায় ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার পর্যবেক্ষণ, ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের 'ইগো'র জন্য ওই অফিসারকে বছরের পর বছর অমানবিকতার শিকার হতে হয়েছে।আদালতের বক্তব্য, 'এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের অফিসারদের একাংশের ইগো প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করছে এবং তাঁদের জন্য নিচুতলার কর্মী-অফিসাররাও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।' তাই হাইকোর্ট কেন্দ্রের অর্থসচিব, মানবসম্পদ উন্নয়ন সচিব এবং ভিজিল্যান্স কমিশনারকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে এমন অফিসারদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে।
একইসঙ্গে অভিযোগকারী ব্যাঙ্ক অফিসারকে হেনস্থায় অভিযুক্ত আধিকারিকদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে। বিচারপতির মান্থার নির্দেশ, তিন সপ্তাহের মধ্যে ব্যাঙ্ককে জরিমানা বাবদ তিন লক্ষ টাকা ওই অফিসারকে মেটাতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কর্মরত অনির্বাণ পাল। পরবর্তীতে এই ব্যাঙ্কটি অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ২০১৫-য় অনির্বাণ মারাত্মক পথ দুর্ঘটনার শিকার হন। তাতে তাঁর শরীরের ৭০ শতাংশ অকেজো হয়ে যায়। এই অবস্থায় তিনি নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতির আবেদন জানাতে পারেননি। যদিও তিনি দেখতে পান, তাঁর মতো অন্তত দু'জন অফিসার পদোন্নতি পেয়েছেন এবং তাঁরা কলকাতাতেই ডিউটি করছেন।
২০১৮-তে অনির্বাণ পদোন্নতির আবেদন জানালে তাঁকে সিনিয়র পদে উন্নীত করে পাটনায় বদলি করা হয়। বিচারপতি মান্থার এজলাসে অনির্বাণের আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী নথি দেখিয়ে যুক্তি দেন, 'ব্যাঙ্কের বিধি অনুযায়ী এমন বিশেষ ভাবে সক্ষমদের ক্ষেত্রে পদোন্নতি দিলেও বদলির কোনও সুযোগ নেই। আমার মক্কেল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে বারংবার আবেদন করেন তাঁকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু কাজ হয়নি।'
আইনজীবী জানান, ওই বছরের শেষদিকে মাস খানেকের ছুটিতে চলে যান অনির্বাণ। তখন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে তাঁকে ই-মেল করে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। না হলে ফল ভালো হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। এক রকম অসহায় হয়ে কাজে ফিরে অনির্বাণ তাঁর পদোন্নতি ফিরিয়ে নিয়ে নিচু পদেই কলকাতায় ফেরানোর আবেদন করেন। তাতেও কোনও কাজ হয়নি।
শেষ পর্যন্ত তিনি 'কমিশনার ফর পারসনস অফ ডিজ়েবিলিটিজ'-এর কাছে আবেদন জানান। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক তাঁকে নিচু পদে কলকাতায় ফিরিয়ে আনে। তারপরে ২০২০-তে অনির্বাণ আবার পদোন্নতির আবেদন জানান। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত না করায় ২০২৩-এর এপ্রিলে তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন।
এত দেরিতে মামলা করায় আদালত সরাসরি তাঁকে পদোন্নতির নির্দেশ দেয়নি, বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষের হাতে। তবে যেভাবে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে, তাতে উষ্মা প্রকাশ করে বিচারপতি ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন।