রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: একের পর এক ভোট-যুদ্ধে পরাজয়ে হতাশাগ্রস্ত সিপিএম সদস্যরা। এমনকী কর্মী, সমর্থকদেরও গ্রাস করেছে হতাশা। তাই এবার গলদ খুঁজতে নামছে আলিমুদ্দিন। উপর থেকে মতামত চাপানো নয়, একেবারে শাখাস্তর থেকে রোগের দাওয়াইয়ের খোঁজ চাইছেন রাজ্য সিপিএম নেতারা। বিজেপির ধাঁচে ‘বুথ চলো’র ডাক দিল আলিমুদ্দিন। পাশাপাশি শাখার সাধারণ কমরেডদের মতামতও নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লাল পার্টির কর্তারা। আগামী প্রায় দুমাস এই মতামত গ্রহণ করা হবে বলে সূত্রের খবর।
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া। তার পর সিপিএমে একের পর এক নির্বাচনে রক্তক্ষরণ চলছেই। উনিশের লোকসভা ভোটে বিপর্যয়, একুশের বিধানসভা নির্বাচন শূন্য আসন। চব্বিশের ভোটেও (2024 Lok Sabha Election)কাটেনি শূন্যের গেরো! রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা একটা দলের আজ নিচুতলার সংগঠন ফোঁপরা, ভাবা যায়! আবার নতুন করে বলতে হচ্ছে বুথে চলো, এলাকায় যাও।” ঘুরে দাঁড়াতে একের পর এক পরীক্ষানিরীক্ষা করেও সুফল অধরা আলিমুদ্দিনের কাছে। একুশের বিধানসভা ভোটে শূন্য হওয়ার পর রাজ্য কমিটির সম্মেলনে প্রবীণদের বড় অংশকে কার্যত ছুটি দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে কমিটিতে আনা হয়েছে। দলের নানা কর্মসূচিতে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধর, প্রতীকুর রহমানদের।
লোকসভা ভোটের আগে গত জানুয়ারিতে দলের যুব সংগঠনের নেতাদের সামনে রেখে ব্রিগেড সমাবেশ করেছিল সিপিএম (CPM)। নির্বাচনেও সিংহভাগ প্রার্থী ছিল তরুণ। পুরনো ‘রিজেক্টেড’ মুখের বদলে পার্টিতে নতুন মুখ এনেও কোনও লাভ হয়নি। বাড়েনি ভোট। মানুষও ভরসা করেনি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি (Sitaram Yechuri)মন্তব্য করেছেন, বাংলা নতুন পার্টি পেয়ে গিয়েছে। এবার ভোটে তরুণ প্রজন্মের প্রার্থীদের লড়াইয়ের প্রশংসা করেছেন সীতারাম। তরুণ প্রার্থীরা নিঃসন্দেহে ভোটের লড়াইয়ে পরিশ্রম করেছেন। ভালো ফল হবে বলে বাম শিবির আশাও করেছিল। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের প্রার্থীদের সকলেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কাজেই তরুণ ব্রিগেডও ব্যর্থ।
এবার তাই একেবারে নিচুতলার কর্মীদের মতামত নিতে চাইছে আলিমুদ্দিন। ভোট বিপর্যয়ের পর দলের রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে, তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি এবং বিজেপির বিকল্প তৃণমূল ? এই বিশ্বাস থেকে এখনও মানুষকে বের করে আনা যায়নি। আর সে কারণেই এবারের নির্বাচনে বিজেপি অনেক বেশি নিষ্ক্রিয় থাকলেও ভোটবাক্সে সিপিএমের প্রাপ্তি বাড়েনি। বেশ কিছু কেন্দ্রে বিজেপি এতটা ভোট পাবে, তা ধারণার বাইরে ছিল। তৃণমূল (TMC) ও বিজেপির (BJP) দ্বিমুখী লড়াইয়ের সমীকরণ ভাঙা যায়নি। ভোটের কাটাছেঁড়া এবার তাই একেবারে নিচুতলা থেকে শুরু করছে আলিমুদ্দিন। গোটা জুলাই মাস ধরে শাখা থেকে জেলা কমিটিগুলি লোকসভা ভোটের ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করবে।