দলীয় সূত্রে খবর, হারের কারণ পর্যালোচনা করে বিধানসভাভিত্তিক রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বকে পাঠানো হয়েছে। সেখানে রাইপুর, রানিবাঁধ, তালড্যাংরা, ছাতনার মতো বিধানসভাগুলিতে আদিবাসী ভোট না পাওয়াকে হারের অন্যতম কারণ বলে দেখানো হয়েছে। এক জেলা নেতার ক্ষোভ, “আমরা এত দিনেও এক জন দক্ষ আদিবাসী নেতা তৈরি করতে পারলাম না। দলের নেতাদের সঙ্গে সাধারণ আদিবাসী মানুষের জনসংযোগ সে ভাবে হয়ে ওঠেনি।” অন্য দিকে, আদিবাসীপ্রধান এলাকাগুলিতে তৃণমূল জনসংযোগে অনেকটাই সফল। তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী তালড্যাংরার বিধায়ক ছিলেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসেবেও আদিবাসী এলাকাগুলিতে জনসংযোগে তিনি অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। অরূপও বারবার দাবি করেছেন, আদিবাসীরা তাঁকে আপনজন মানেন।
বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ৩২ হাজার ভোটের ব্যবধানে দলীয় প্রার্থী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারের পরাজয়ে দলের রাজ্য নেতাদের অনেকেই অবাক। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট তুলনায় বেশ কম। তার পরেও এই ফলে জেলার বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ নিচুতলায় সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মানছেন। নির্বাচনের বহু আগে থেকে ‘লভ্যার্থী সম্পর্ক অভিযান’, ‘গ্রামে চলো অভিযান’, ‘গৃহসম্পর্ক অভিযান’-এর মতো দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে দফায় দফায় মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছনোর চেষ্টা চলেছে। তবে ওই কর্মসূচিগুলিতে নিচুতলায় ফাঁক-ফোঁকর রয়ে গিয়েছে বলে পর্যালোচনায় উঠে এসেছে।
এক বিজেপি কার্যকর্তা বলেন, “আমরা যে সব বুথে লিড পেয়েছি, সেখানেও ব্যবধান সামান্য। অথচ যেখানে হেরেছি, বড় ব্যবধান হয়েছে। তার মানে সার্বিক ভাবে জনসংযোগে আমরা বিফল হয়েছি।” নেতৃত্বের একাংশেরও দাবি, দলের নিচুতলার এক শ্রেণির নেতারা কর্মসূচির নামে কেবল ছবি তুলে সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সমাজমাধ্যমে ষতটা সক্রিয়তা দেখান, মাঠে নেমে তার ইঞ্চিমাত্রও করেন না। তৃণমূলের ক্ষেত্রে তা নয়। এখানেই দু’টি দলের ফারাক হয়ে গিয়েছে। এর সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ হারের জন্য দলের একাংশের বাড়তি আত্মবিশ্বাসকেও দায়ী করেছেন। দলের এক নেতা বলেন, “২০১৯-এর ভোটে সংগঠন তেমন না থাকলেও হাওয়া ব্যাপক ছিল। আমরা জিতেছিলাম। এ বারও হাওয়াতেই জয় হবে বলে অনেকে নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু বারবার কেবল হাওয়ায় ভর করে জেতা যায় না। তা প্রমাণ হয়ে গেল।”
হার থেকে শিক্ষা নিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে নিচুতলায় দক্ষ নেতা বানানোকে পাখির চোখ করছে বিজেপি। এক জেলা নেতা বলেন, “নিচুতলায় আমাদের নেতাদের কাছে এলাকার খবরই সে ভাবে থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের কাছে কোনও ঘটনা শুনে স্থানীয় নেতাকে জানালেও তথ্য মেলে না। সেই খামতি পূরণে জোর দেওয়া হবে।” বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, “পরাজয়ের কারণ পর্যালোচনা করে প্রাথমিক রিপোর্ট রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক ফাঁক-ফোঁকর মিটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে দল প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপের তবে দাবি, কেবল আদিবাসী ভোটই নয়, সার্বিক ভাবেই পরাজিত হয়েছে বিজেপি। ওদের আর ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই।