‘একের পর এক বেআইনি বাড়ি, বাংলাকে বদলে দিচ্ছে’, জমি জবরদখল নিয়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ মমতার
প্রতিদিন | ২৪ জুন ২০২৪
নব্যেন্দু হাজরা: জমি জবরদখল নিয়ে দিন কয়েক ধরেই ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছিলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এবার পুরসভার চেয়ারম্য়ানদের নিয়ে বৈঠকে জমি দখল, পুর পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটালেন তিনি। সোমবার নবান্ন সভাঘরের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সাফ প্রশ্ন, “পরিষেবা না পেলে পুরসভার দরকার কী? একের পর এক বেআইনি বাড়ি তৈরি হচ্ছে, বাংলার ছবি বদলে দিচ্ছে। জনপ্রতিনিধি থেকে পুলিশ-আমলা অনেকেই যুক্ত, সবার নাম প্রকাশ্যে বলে অপমান করতে চাই না।” শিলিগুড়িতে জমি মাফিয়া-রাজ নিয়েও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ” শিলিগুড়িতে ল্যান্ড মাফিয়া তৈরি হয়েছে। সিপিএম জমানার প্রোমোটিং সিন্ডিকেট এখনও চলছে।”
প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী-উবাচ:
১. একটা গ্রুপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। খালি জায়গা দেখলেই লোক বসিয়ে দিচ্ছে। একে তো কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। আমি কত টালব? বাংলার আইডেন্টটিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কেন বুঝতে পারছেন না? আপনার এবং আপনাদের টাকা খাওয়ার জন্য বাংলার পরিচয় নষ্ট হচ্ছে। রাজ্য সরকারের জমি পাচ্ছেন, বেচে দিচ্ছেন।
২. পুরসভাগুলোর জঘন্য পারফরম্যান্স। কেন তৈরি করা হয়েছিল, জানি না। সবাই বলে, আলাদা পুরসভা করে দিন, কী লাভ, যদি জনতা পরিষেবা না পায়।
৩. রথীন যখন ছিল, তখন হাওড়ার ১২টা বাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকার জায়গা নেই। প্ল্যান পাস করতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমরা তো এটা অনলাইন করে দিয়েছি, তার পরেও…
৪. হাওড়ায় জঞ্জালের ভ্যাট নিয়মিত পরিস্কার হয় না। রাস্তায় ময়লা চলে আসে।
৫. নিজেরা ইচ্ছেমতো টেন্ডার করছেন, সেখান থেকে নিজেরা টাকা খাচ্ছেন। কেউ খাচ্ছেন, কেউ খাচ্ছেন না। নিশ্চয়ই দিয়েটিয়ে খাচ্ছেন। একটা গ্যাং তৈরি হয়ে গিয়েছে। একথাগুলো আমাকে বলতে হচ্ছে, আমি দুঃখিত।
৬. ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় লাইট জ্বলেই যাচ্ছে। ভাবছে, সরকার টাকা দেবে। টাকা আসছে কোথা থেকে? এটা জনগণের টাকা।
৭. জল পড়ে যাচ্ছে তো পড়েই যাচ্ছে। কিছু লোকের অভ্যেস আছে, ঢাকনা করলেও ঢাকলা খুলে বিক্রি করে দেয়। তাহলে অটোমেটিক সিস্টেমে যাব না কেন আমরা? হাত বা বালতি পাতলে জল পড়বে, ভরে গেলে নিজে থেকে বন্ধ হয়ে যাবে, কেন এমন সিস্টেম বের করতে পারিনি আমরা?
৮. এখানে আমরা পরিবেশ দেখে কিছু করতে পারব না। পেতল-তামা-লোহা যখন বেচে দিচ্ছে, তাহলে প্লাস্টিকই ব্যবহার করুন, আপাতত সেফ থাকবে।
৯.ভ্যাটের বাইরে নোংরা পড়ে থাকে, দেখেনও না। লজ্জা লাগে না?
১০. রাস্তা আমরা সারালে তবে সারাবেন, তাহলে আপনাদের টাকা যাচ্ছে কোথায়?
১১. হাওড়ায় কনজারভেশন সিস্টেম নেই। অথচ আমরা টাকা দিয়ে দিয়েছি।
১২. পদ্মপুকুরে ওয়াটার লাইনে বার বার ফাটল হচ্ছে, সারাতে গেলে নোংরা জল মিশে যাচ্ছে। দয়া করে এটা বুঝুন।
১৩. যারা টাকার বিষয় বেশি উৎসাহী তাঁদের মনে রাখতে হবে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি দামি কিছু নয়। মানুষের জীবনের চেয়ে দামি কিছু নয়। আপনি আপনার কাজ করছেন না, এটা লজ্জার।
১৪. আমাদের জিজ্ঞেস না করে যখন তখন কর বাড়িয়ে দিচ্ছে পুরসভাগুলো, যখন তখন ক্যাজুয়াল লোক নিয়োগ করছে। বার বরা বলা হচ্ছে, ফাইন্যানসিয়াল অর্ডার ছাড়া করবেন না।
১৫. শিলিগুড়িতে ল্যান্ড মাফিয়া তৈরি হয়েছে। সিপিএম জমানার প্রোমোটিং সিন্ডিকেট এখনও চলছে।
১৭. হাওড়া পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি। চিফ সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিচ্ছি, রাম-শ্যাম-যদু-মধু যেই হোক, ইভেন আমি হলেও ছাড়বেন না। আমি জানতে চাই, কে দখল করেছে, কারা আছে এর পিছনে, কারা গ্যাং তৈরি করেছে। আমি সব জানতে চাই। সরকারি সম্পত্তি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। লোভ বেড়ে যাচ্ছে, লোভটা কমাতে হবে।
১৮. বাইরে থেকে এসে এখানে সব জমি দখল করে নিচ্ছে, কারণ টাকার বিনিময়ে। সরকারের অনুমতি ছাড়া সরকারি জমিতে বড় বড় মাস্টিস্টোর কমপ্লেক্স হয়ে যাচ্ছে।
১৯. রাজ্য সরকার বহু নতুন রাস্তা করছে, কিন্তু সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। আমি তো বলে দিয়েছিলাম, যে কোম্পানি রাস্তা তৈরি করবে তাকে ৫ বছরের গ্যারান্টি নিতে হবে। কিন্তু করছে না।
২০. সলিড ম্যানেজমেন্টে টাকা অ্যাডভান্স করে দিচ্ছেন, সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। কেন দিচ্ছেন? কে পাওয়ার দিয়েছে? লোকালি আর হবে না।
২১. দায়িত্ব এসডিও-কে দিয়েই যা ডিএম-কে দিলেও তাই, নমিনেটেড মেম্বারকে দিলেও তাই আবার ইলেকটেড বডিকে দিলেও তাই। মহা মুশকিল হয়ে গেছে, কাকে দিয়ে করাব? পুরসভা, পুরনিগম দায়িত্ব পালন করছে না। শুধু কর বাড়ানো. বিল্ডিং তৈরি আর লোক বসানো ছাড়া।
২২. হকাররা আমাদের ভাইবোন। কিন্তু এর থেকে যেন আর না বাড়ে। হাতিবাগানটা তাকিয়ে দেখেছেন কখনও? গড়িয়াহাটে দোকান করেছে, তার পিছনে আবার লাল-কালো ত্রিপল লাগিয়েছে। এমন কিছু সিস্টেম করুন যাতে দেখতে ভালো লাগে।