• 'মানুষ উন্নয়নের কাজ না পেলে পুরসভা রাখার কী দরকার?' ধমক মমতার
    এই সময় | ২৪ জুন ২০২৪
  • সোমবার নবান্নে পুরপরিষেবা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন জমি জবরদখল নিয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাঁকে। এদিন নবান্নে রাজ্যের সমস্ত পুরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান এবং রাজ্যের পুরো ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন একাধিক উল্লেখযোগ্য বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।জবরদখল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী

    এদিন 'এনকোচমেন্ট' বা জবরদখল নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, 'রাস্তা এনকোচমেন্ট হলে কেন পদক্ষেপ করছি না? 'মাল্টিপল ইন্টারেস্টেড গ্রুপ' এটা করছে। মানুষ যদি উন্নয়নের কাজ না পায় তাহলে সেই পুরসভা বা পঞ্চায়েত রাখার দরকার কী?'

    এদিন হাওড়া পুরসভার পরিষেবা প্রদান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘রথিন চক্রবর্তী চেয়ারম্যান থাকাকালীন পুরসভার ১২টা বাজিয়ে গিয়েছে। কোথাও জবরদখল হলে কেন সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ কেন করা হচ্ছে না? খালি জায়গা দেখলেই লোক বসিয়ে দিচ্ছে। কিছু মানুষের টাকা খাওয়ার জন্য রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ঠ হচ্ছে। পুরসভাগুলির পারফর্ম্যান্স খুব খারাপ।’

    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, 'সরকারি সম্পত্তি কারও ব্যক্তিগত নয়। লোভ বেড়ে যাচ্ছে। লোভ কমাতে হবে।' সুজিত বোসের নাম নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। প্রতিযোগীতা করে লোক বসানো হচ্ছে, উষ্মা প্রকাশ করে বলেন তিনি। বিএলআরও-দের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জবরদখল হওয়া জায়গা পুনরুদ্ধার করতে হবে, স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি। হাতিবাগান এবং গড়িয়াহাট নিয়েও অসন্তোষের সুর শোনা যায় তাঁর কণ্ঠে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, 'নবান্নের আশেপাশে এক কিলোমিটার এলাকায় জি প্লাস ফোর বিল্ডিং করা নিষিদ্ধ। তারপরেও হচ্ছে। অনুমতি দিচ্ছে, কারণ টাকা পাবে।' মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, 'কোনও অবহেলা শুনব না। অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি। গায়ের জোরে জমি দখল করবে এটা হবে না।'

    জঞ্জাল পরিষ্কার সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন হাওড়া পুরসভাকে কড়া ভর্ৎসনা করেন। তিনি বলেন, 'হাওড়ায় ভ্যাট পরিষ্কার হয় না। রাস্তায় ময়লা আসছে। বালি পুরসভার এসডিও

    অমৃতা রায় বর্মন কী করছেন? হাওড়াতে কনজারভেন্সির এখনও পর্যন্ত কোনও সিস্টেম নেই। কিন্তু, আমরা টাকা দিয়েছি। এই ধরনের ঘটনায় রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।'

    পাশাপাশি সল্টলেক পুরসভার প্রসঙ্গ টেনে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'কেন সল্টলেক পুরসভার কাউন্সিলররা কাজ করে না? কেন রাস্তা ঝাঁট দেয় না? এবার কি আমি ঝাঁট দেব? রাস্তা দেখে না, জল দেখে না।'

    সরকারি কর্তাদের ধমক

    এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'কারও কারও বদ অভ্যাস, আইসি হলে কিছু আয় করে নিই, এসডিও-ডিএম হলে সঞ্চয় করে নিই, এই ধরনের মনোভাব দেখা যাচ্ছে। এগুলো আর করবেন না প্লিজ। লজ্জা লাগছে।' সমস্ত সরকারি কর্তাদের নিজেদের কাজ সততার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে, স্পষ্ট বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

    কর বৃদ্ধি এবং অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

    এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের জিজ্ঞাসা না করেই যখন তখন কর বাড়িয়ে দিচ্ছে পুরসভাগুলি। যখন তখন ক্যাজুয়াল লোক নিচ্ছে। ফাইন্যানসিয়াল অর্ডার ছাড়া এগুলো না করার কথা বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু, অনলাইন ছাড়া তা কী ভাবে দেওয়া হচ্ছে?'

    আর স্থানীয়ভাবে টেন্ডার নয়

    এদিনের বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, আর কোনও টেন্ডার স্থানীয়ভাবে হবে না। তা কেন্দ্রীয়ভাবে হতে চলেছে। এই নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যেখানে থাকবেন মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ভূমি দফতরের সচিব, অর্থ সচিব, সেচ দফতরের আধিকারিকস সিপি এবং এডিজি ল অ্যান্ড অর্ডার। '

    যে সমস্ত এলাকায় বোর্ড বা কাউন্সিলর নেই সেখানে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ করা হবে, তার একটি বিস্তারিত রূপরেখা তৈরি করতে ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

    সংযোজিত এলাকার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ

    এদিন এডেড এরিয়াগুলিতে পুরপরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'জোকায় কেন কাঁচা রাস্তা রয়েছে? সংযোজিত এলাকার জন্য সঠিক কোনও পরিকল্পনা নেই। পুরসভায় শক্তিশালী লিডারশিপ দরকার। কিছু পুরসভায় কাউন্সিলর না থাকায় বিধায়করা অ্যাডভান্টেজড নিচ্ছে।'

    এদিন বিভিন্ন পরিষেবার নিরিখে কোন পুরসভাগুলির প্রদর্শন কেমন, তা স্পষ্ট ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

    পানীয় জল সরবরাহের নিরিখে সেরা- উলুবেড়িয়া, হালিশহর , কলকাতা পুরসভা, বৈদ্যবাটী ও বাঁকুড়া পুরসভা।

    খারাপ প্রদর্শন- আলিপুরদুয়ার, বালি, বরানগর, শিলিগুড়ি, শান্তিপুর পুরসভা।

    হাউজিং-এর ক্ষেত্রে সেরা- উলুবেড়িয়া, জঙ্গিপুর, হাবড়া, কৃষ্ণনগর, মধ্যমগ্রাম পুরসভা

    খারাপ প্রদর্শন- বিধাননগর, আসানসোল , রায়গঞ্জ ও কন্টাই পুরসভা (এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব সম্পত্তি করে রেখে দিয়েছে নিজস্ব। তা ভেঙে দেব আমি।)

    পরিচ্ছন্নতা এবং জঞ্জাল পরিষ্কার

    সেরা- কলকাতা, সিরহাট, বৈদ্যবাটী উত্তরপাড়া,উত্তর দমদম, নবদ্বীপ পুরসভা

    খারাপ- কন্টাই, ডালখোলা, পানিহাটী, হাওড়া, সিউড়ি পুরসভা।

    পাশাপাশি অযথা বিদ্যুৎ এবং জল অপচয় বরদাস্ত করা হবে না বলে স্পষ্ট জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'সব জায়গায় স্ট্রিট লাইট সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা থেকে সকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত জ্বলবে। তার বেশি জ্বললে সেই দফতরকে টাকা দেওয়া হবে না। বিদ্যুৎতের নামে টাকা নিয়ে অন্য খাতে খরচ করছে।'

    অর্থাৎ কোনওভাবেই যাতে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সামান্যতম ত্রুটি না হয় সেই দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
  • Link to this news (এই সময়)