• বিশেষভাবে সক্ষম অফিসারকে পদোন্নতি নিয়ে হেনস্থা ব্যাঙ্কের, জরিমানা করল হাইকোর্ট
    হিন্দুস্তান টাইমস | ২৪ জুন ২০২৪
  • খাস কলকাতায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি করেন বিশেষভাবে সক্ষম এক অফিসার। কিন্তু ওই অফিসারকে নানাভাবে হেনস্থা করেন কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ। কিন্তু প্রথমে সেটা সহ্য করে নিচ্ছিলেন ওই অফিসার। কিন্তু যেদিন সেটা সহ্যের সীমা অতিক্রম করল সেদিন তিনিও আর কোনও পথ খোলা না দেখতে পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আর তখনই চরম অমানবিকতায দেখে ক্ষুব্ধ হয় কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার পর্যবেক্ষণ, ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ইগোর জেরেই ওই অফিসারকে বছরের পর বছর অমানবিকতার শিকার হতে হয়েছে।

    ওই অফিসারকে নানা কটূ কথা এমনিতেই হজম করতে হতো। যেহেতু তিনি নরম প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তাই তাঁকে নানাভাবে অপমান করা হতো বলে অভিযোগ। তার পরও পদোন্নতি নিয়ে যা করা হয়েছে সেটা কার্যত অমানবিক। কলকাতা হাইকোর্টের বক্তব্য, ‘‌এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের অফিসারদের একাংশের ইগো সার্বিক ক্ষতি করছে। আর তাঁদের জন্য নিচুতলার অফিসাররাও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।’‌ তাই কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রের অর্থসচিব, মানবসম্পদ উন্নয়ন সচিব এবং ভিজিল্যান্স কমিশনারকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে এমন অফিসারদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে মামলাকারী ব্যাঙ্ক অফিসারকে হেনস্থায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশ, তিন সপ্তাহের মধ্যে ব্যাঙ্ককে জরিমানা বাবদ তিন লক্ষ টাকা ওই অফিসারকে দিতে হবে।


    এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কর্মরত অফিসারের নাম অনির্বাণ পাল। এই ব্যাঙ্কটি অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে পরে সংযুক্ত হয়। ২০১৫ সালে অনির্বাণবাবুর মারাত্মক পথ দুর্ঘটনা শরীরের ৭০ শতাংশ অকেজো হয়ে যায়। তাই নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতির আবেদন জানাতে পারেননি। পরে অনির্বাণ পাল দেখতে পান, তাঁর মতো অন্তত দু’‌জন অফিসার পদোন্নতি পেয়েছেন। আর তাঁরা কলকাতায় ডিউটিও করছেন। ২০১৮ সালে অনির্বাণ পদোন্নতির আবেদন করেন। তখন তাঁকে সিনিয়র পদে উন্নীত করে পাটনায় বদলি করা হয়। এই অমানবিক আচরণ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। এই বিষয়ে বিচারপতি মান্থাকে অনির্বাণবাবুর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী নথি দেখিয়ে যুক্তি দেন, ‘‌ব্যাঙ্কের বিধি অনুযায়ী বিশেষভাবে সক্ষমদের পদোন্নতি দিলেও বদলির কোনও সুযোগ নেই। আমার মক্কেল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বারবার আবেদন করলেও তাঁকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়নি।’‌

    এরপর কোনও আবেদন কার্যকর না হওয়ায় অনির্বাণবাবু একমাসের ছুটিতে চলে যান। তখন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দেন। তাঁকে ইমেল করে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। না হলে ফল ভাল হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে অনির্বাণ তাঁর পদোন্নতি ফিরিয়ে নিয়ে নিচু পদেই কলকাতায় ফেরার আবেদন করেন। তাতেও কোনও কাজ হয়নি। শেষে কমিশনার ফর পারসনস অফ ডিজেবিলিটিজের কাছে আবেদন জানান। তাদের সুপারিশে ব্যাঙ্ক তাঁকে নিচু পদে কলকাতায় ফিরিয়ে আনে। তারপরে ২০২০ সালে অনির্বাণ আবার পদোন্নতির আবেদন জানালে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি। ২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন তিনি। অনির্বাণকে হেনস্থা করার জেরে উষ্মাপ্রকাশ করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন বিচারপতি।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)