• মন্ত্রী থেকে আমলা, পুরসভা থেকে পুলিশ, মমতার তোপের মুখে দিশেহারা ...
    আজকাল | ২৫ জুন ২০২৪
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাখঢাক নেই। একেবারে চাঁচাছোলা ভাষাতেই পুর পরিষেবা নিয়ে দলীয় নেতা-সহ আমলা ও পুলিশ প্রশাসনকে তুলোধনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এদিন নবান্নের সভাঘরে পুরমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের উপস্থিতিতেই এবিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী দলীয় বিধায়ক ও প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, কাজ না করলে আগামীদিনে আর টিকিট দেওয়া হবে না। তাঁর কথায়, 'আমাদের টাকা তোলার লোকের দরকার নেই।' 

    গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২৯টি আসন পেলেও ফলাফল হিসাব করে দেখা গিয়েছে, বহু পুর এলাকায় তৃণমূল মোটেই সুবিধা করতে পারেনি। যেখানে পরিষেবা নিয়ে নাগরিকদের ক্ষোভকে গুরুত্ব দিয়েই এদিন নবান্নের সভাঘরে একেবারে রণং দেহি মূর্তি ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। 

    হাওড়া ও সল্টলেক পুরসভার ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। সল্টলেকের একটি অংশে দখলদারি নিয়ে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর উদ্দেশ্যে বলেন, 'ত্রিপল লাগিয়ে লোক বসে পড়ছে‌। সুজিত বসু প্রতিযোগিতা করে লোক বসাচ্ছে। কেন সল্টলেক পুরসভা কাজ করছে না?' রাস্তার অপরিচ্ছন্ন অবস্থার জন্য তাঁর প্রশ্ন, 'এবার কি আমাকে রাস্তায ঝাঁট দিতে হবে?'

    হাওড়া পুরসভার প্রসঙ্গে এর আগের মেয়র ও বর্তমান বিজেপি নেতা রথীন চক্রবর্তী প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'হাওড়ার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে রথীন।' নির্বাচন না হওয়ার জন্য এইমুহূর্তে হাওড়া পুরসভার কাজ দেখছেন একজন প্রশাসক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'হাওড়া পুরসভার প্রশাসক সব দায়িত্ব নিজের হাতে রেখেছেন। কারোর সঙ্গে আলোচনা করেন না। কাউন্সিলর না থাকায় সুযোগ নিচ্ছেন বিধায়করা। ওখানে মহকুমা শাসক কোনও কাজ করেন না।' পরিষেবার উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন জেলাশাসকের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় বিধায়ককে নিয়ে পরিকল্পনা তৈরির। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, মহকুমা শাসককে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। তিনি কোনও কাজ করছেন না। এদিন পুর এলাকায় বেআইনি পার্কিং নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। শালিমার স্টেশনে একটি গোলমালের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'সরকার কি এর থেকে পয়সা পায়? তবে কেন দায়িত্ব নেবে?' এপ্রসঙ্গে পুলিশকে নেতা-মন্ত্রী না দেখে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন মমতা। বিভিন্ন এলাকায় সরকারি জমি জবরদখল নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে নির্দেশ দেন কোনও রঙ না দেখে কাজ করতে। পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তাঁর নজরে সবকিছু আছে। আগামীদিন 'অ্যাকশন' হবে। 

    এর পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি এলাকায় জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধেও সরব হয়ে বলেন, ইতিমধ্যেই এবিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশের একটি অংশ যুক্ত আছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। 

    এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়েন নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিবও। তাঁকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন মমতা। 

    বিদ্যুৎ ও জল অপচয় নিয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, সন্ধে সাড়ে পাঁচটা থেকে পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত রাস্তার আলো জ্বলবে। এরপর জ্বললে রাজ্য সরকার আর টাকা দেবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে নিয়মের বাইরে যে কোনও পুরসভায় উন্নয়ন বা ডেভেলপমেন্ট ফি নেওয়া যাবে না সেকথাও বলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, মানুষ পরিষেবা না পেলে পঞ্চায়েত, পুরসভা রেখে কী লাভ? 

    কাজের স্বচ্ছতার জন্য এদিন বেশ কয়েকটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে নির্দেশ দিয়েছেন টেন্ডার কেন্দ্রীয়ভাবে করতে। তাঁর সাফ কথা, কারোর টাকা খাওয়ায় জন্য তিনি বাংলার বদনাম করতে দেবেন না। এদিনের সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিস্তার জলবন্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির পুনর্নবীকরণ ও ফরাক্কা ব্যারেজ ও নিট নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কড়া চিঠি দিয়েছেন।
  • Link to this news (আজকাল)