তৃণমূলী নেতার দাপটে ৬ বছর স্কুলছাড়া শিক্ষক! আদালতের হস্তক্ষেপে শাপমোচন
প্রতিদিন | ২৫ জুন ২০২৪
গোবিন্দ রায়: তৃণমূল নেতাদের বাধায় ৬ বছর স্কুলেই ঢুকতে পারেননি সহকারী প্রধান শিক্ষক। অবশেষে আদালতের নির্দেশে শাপমোচন। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতির নির্দেশ, শিক্ষককে অবিলম্বে স্কুলে যোগদান করাতে হবে। ২০১৭ সাল থেকে সমস্ত বকেয়া সুদ সমেত শিক্ষককে মিটিয়ে দিতে হবে।
২০১২ সালে বীরভূমের তেঁতুলবেড়িয়া জুনিয়র হাই স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ মিয়া। ২০১৬ সালে ওই স্কুলেরই টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব পান তিনি। সৌমেন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত পরিচালন কমিটির সঙ্গে ২০১৬ সাল থেকেই তাঁর মতানৈক্য শুরু হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজারাম ঘোষ ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি ছিলেন। কমিটির কয়েকজন সদস্য মিলে স্কুলের খেলার মাঠে অবৈধ নির্মাণ শুরু করেন বলে অভিযোগ টিচার ইনচার্জের। তিনি বলেন, “আমি বাধা দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে। শুধু তাই নয়, থানাতেও প্রভাব খাটায়। পুলিশ শাসানি দেয় স্কুলে ঢুকলে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবে।”
দিনের পর দিন স্কুলে এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজারাম ঘোষ রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে শিক্ষাদপ্তরও কোনওরকম পদক্ষেপ করেনি বলে দাবি। স্থানীয় পুলিশও তাঁকে স্কুলে ঢুকতে সাহায্য করেনি। ওই শিক্ষকের অভিযোগ, পরবর্তী সময়ে পদত্যাগ করার জন্য তাঁর উপর চাপ তৈরি করা হয়। শেষমেষ তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। যদিও সেই ইস্তাফাপত্র নিয়ে স্কুল কোনও সিদ্ধান্তের কথা না জানানোয় তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। শিক্ষাদপ্তরের কাছে আবেদন করেন তাঁকে যেন স্কুলে যোগদান করানো হয়।
ওই শিক্ষকের আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী সোমবার আদালতে জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু না জানিয়ে বেতন বন্ধ করে দিতে পারে না। আজ পর্যন্ত তাঁকে শোকজ, সাসপেন্ড কিছুই করা হয়নি। একজন স্কুলের শিক্ষককে কিছু না জানিয়ে তার বেতন বন্ধ করা নিয়ম বিরুদ্ধ। এমনকী. স্কুল যেসব অভিযোগ এনেছিল তার কোনও প্রমাণ নেই। কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ এলে তৎক্ষণাৎ কোনও ব্যবস্থা না নিলে এবং তিন বছর অতিক্রান্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। রাজ্য সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন বন্ধ করে ৭ বছর বসে থাকতে পারে না। রাজ্য সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনজীবীরা কোনও সদুত্তর কোর্টকে দিতে পারেনি।
বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, “একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে বেতন বন্ধ করে বসে থাকতে পারেন কি? আইন তো অন্য কথা বলছে,আপনারা এইভাবে বসে থাকতে পারেন না।” অবশেষে শিক্ষককে চাকরি ফেরানোর নির্দেশ দেন।