পাশাপাশি, তৃণমূলত্যাগী এ বারের বিজেপির লোকসভা প্রার্থীকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রথীন যখন চেয়ারম্যান ছিল, তখন হাওড়ার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। হাওড়ার অনেক রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকার জায়গা পর্যন্ত নেই।’’ মমতা জানান, রাজ্য সরকারের একের পর এক জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। বাইরের রাজ্যের লোকজন এসে ঘাঁটি গাড়ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও জবরদখল হলে কেন পদক্ষেপ হচ্ছে না?’’ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, টাকার বিনিময়ে জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কেউ কেউ অনৈতিক এবং অবৈধ ভাবে জমি ‘ভরানোর’ কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে আছেন এর মধ্যে। নাম বলে কাউকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাই না। তবে একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। খালি জায়গা দেখলেই তাঁরা লোক বসাচ্ছেন। বাংলার আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ সবে রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’’
হাওড়ার নাগরিক পরিষেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জঞ্জাল পরিষ্কার হয় না। যিনি দায়িত্বে আছেন তাঁকে বলছি... অমৃতা রায় বর্মণ, এসডিও।’’ আবার জমি বেদখল নিয়ে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘কেউ টাকা খেয়ে এ সব করছেন। নিশ্চয়ই দিয়ে-টিয়ে খাচ্ছেন। আই অ্যাম সরি। কিন্তু এ সব বলতে হচ্ছে। একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে, বলতেই হচ্ছে।’’ হাওড়ার পরিষেবা নিয়ে বলে চলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও আলো জ্বলছে তো জ্বলছেই। এ সবের টাকা দেবে রাজ্য সরকার! কোথাও কল থেকে জল পড়ছে তো পড়ছেই।’’ তিনি আরও বলেন, ~~হাওড়া পুরসভার প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী সব দায়িত্ব নিজের কাছে রেখেছেন। কারও সঙ্গে আলোচনা করছেন না।’’ হাওড়া সদরের মহকুমাশাসকে ভর্ৎসনা করেন। আবার বালি পুরসভা আলাদা হয়ে যাওয়ার পরেও কেন হাওড়া থেকে নজরদারি করতে হবে, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বেশ কয়েকটি এলাকার নাম উল্লেখ করে মমতা মন্তব্য করেন, ‘‘দেখেন না, লজ্জাও লাগে না? জনগণ পরিষেবা না পেলে পুরসভা-পঞ্চায়েত রেখে লাভ কী?’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকলে সেটাও খুলে নিয়ে বিক্রি করে দেন অনেকে। তার জন্য কেন একটা সিস্টেম তৈরি হচ্ছে না? কেন জল অপচয় হচ্ছে? ‘অটোমেটেড’ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? আবার হাওড়ার কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘কেউ টাকা খেয়ে, কেউ টাকা খাইয়ে এ সব করাচ্ছেন। রাজ্য সরকারের জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। হাওড়া পুলিশকে বলব একটা তদন্ত করার জন্য। চিফ সেক্রেটারিকেও অর্ডার দিচ্ছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাম-শ্যাম, যদু-মধু যে-ই হোন, আমিও যদি হই, ছাড়বেন না। লোভ বেড়ে যাচ্ছে। লোভটাকে কমাতে হবে। সরকারি জমি দখল করে একটার পর একটা বড় বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। রাজ্য সরকার নতুন রাস্তা তৈরি করেছে। তার রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। কেন এ সব হবে? দেখার দায়িত্ব কেবল আমার?’’
এই ভর্ৎসনার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী একটি দৃঢ় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, এ বার থেকে জমি বণ্টন থেকে সৌরশক্তি, যে কোনও কাজের টেন্ডার আর স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে পরিচালনা করা হবে না। তিনি বলেন, ‘‘এ গুলো উপর থেকে দেখতে হবে। এর জন্য কমিটি গড়ে দেব। কিন্তু লোকালি কাকে দিয়ে করব এগুলো? এসডিওকে দিলেও যা, ডিএমকে দিলেও তাই।’’
ফুটপাথ দখল করে অস্থায়ী দোকান বসানো নিয়েও মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী, অন্য জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্তাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘হাতিবাগানে কখনও তাকিয়ে দেখিয়েছেন? কী অবস্থা ওখানে। গড়িয়াহাটে হকার বসিয়েছেন। সে দিন ওয়েবেলের সামনের (বিধাননগর) রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। দেখলাম একের পর এক দোকান বসিয়ে দিয়েছে। দেখতে ভাল লাগছে?’’ তিনি মন্ত্রী সুজিত বসুর উদ্দেশে বলেন, ‘‘রাজারহাটে সুজিত লোক বসাচ্ছে কম্পিটিশন করে।’’ আবার পুলিশকে ভর্ৎসনা করে পুলিশমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘‘সবাই চোখে ঠুলি পরে আছে! কারও চোখে কিচ্ছু পড়ছে না। অবৈধ ভাবে তালার পর তালা উঠছে। দু’-এক জনকে অ্যারেস্ট তো করুন! বেআইনি যদি হয়, ‘স্টার্ট ফ্রম মাই হাউস।’ কেন বাইরের লোক বসবেন এখানে? একটা করে ত্রিপল লাগাচ্ছে, এক জন করে বসে পড়ছে।’’ তীক্ষ্ণ স্বরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘হোয়াই? হোয়াই? হোয়াই?’’
মমতা প্রশ্ন তোলেন, দিঘা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি থাকার প্রয়োজনীয়তা কী? তাঁর কথায়, ‘‘সেখানে তো পুরসভা আছে। লাভটা কী? এ রকম ভাবে তো চলতে পারে না।’’ নগরোন্নয়ন দফতরের সেক্রেটারিকেও ভর্ৎসনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এ বার থেকে কেউ কোনও কাজ করলে তার রিভিউ হবে। তদন্তও হবে। প্রশাসনিক কর্তাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘আজকের আমার বলার দিন। আপনাদের শোনার দিন। কিন্তু এই কথাগুলো নেতিবাচক ভাবে নেবেন না কেউ। মানুষের কাজ করার কথা বলছি।’’