নুড়ি বিছানো পথ পেরিয়ে গহন জঙ্গলের ভেতর সবুজ রঙা একটি বাংলো। প্রকৃতি আর ইতিহাসের অদ্ভুত মিশেলে সেই বাংলো ছিল পর্যটকদের তীর্থস্থান। জলদাপাড়া অভ্যারণ্যের ভেতর ছবির মতো সুন্দর সেই ‘নস্টালজিয়া’ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে কয়েকদিন আগেই। তবে, পুরনো ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক শোভার কথা মাথায় রেখেই বাংলোটির পুনর্নির্মাণ করা হোক। এমনটাই আবেদন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে চিঠি লিখল হিমালয়ান হসপিটালিটি এন্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক।পরিবেশ প্রেমী থেকে শুরু করে পর্যটকদের একাংশ চাইছেন, কাঠের তৈরি সেই বাংলোর ঐতিহ্য মেনেই পুনর্নির্মাণ করা হোক। সবুজ বনানীর মাঝে ইট, পাথর, কংক্রিটের ভিড় বড্ড বেমানান। তাই, নতুন বাংলো নির্মাণের সময় যেন রূঢ় আধুনিকতা অগ্রাধিকার না পায়। প্রকৃতির কোলে মাথা তুলে দাঁড়ানো এই বাংলোর প্রাচীনত্বই অনেক বেশি সুন্দর, অনেক বেশি মলিন।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক-এর সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘আগের মতোই হলং বাংলো তৈরি করা হোক। ন্যাচেরাল হেরিটেজ যেমনটা ছিল। কাঠের তৈরি সেই পুরোনো বাংলো তৈরি করা হোক। এছাড়াও বন দফতরের উচিত পর্যটন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা।’ চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে সেই আবেদনই জানানো হয়েছে। তাঁদের তরফে অনুরোধ জানানো হয়েছে, বিভিন্ন প্রকৃতিপ্রেমী, প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণকারী সংস্থা, পরিবেশপ্রেমী, পর্যটনের স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হোক। তাঁদের সুদক্ষ পরামর্শে নতুন বাংলো নির্মাণের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা যেতে পারে।
জলদাপাড়ার হলং বনবাংলোয় অগ্নিকাণ্ড নিয়ে রাজ্যের কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট ইতিমধ্যেই জমা দিয়েছে বন দফতর। পুলিশ ও দমকলের রিপোর্টও জমা পড়েছে ইতিমধ্যে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ছয় সদস্যের একটি দলও গঠন করা হয়। হলং বাংলোর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নিজে রিপোর্ট প্রকাশ করবেন বলে জানিয়ে দেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন রাতে অগ্নিকাণ্ডের জেরে ভস্মীভূত হয়ে যায় ঐতিহ্যশালী এই হলং বাংলো। প্রাথমিকভাবে শট সার্কিট থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। চোখের নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বাংলোটি। আবার বন দফতরের একাংশের মতে কোনও ভাবে এসিতে আগুন লেগে গিয়েছিল। এসিতে যে গ্যাস থাকে, তা থেকে বিস্ফোরণ হয়েছিল যার শব্দও শোনা গিয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।