মোবাইল চুরিতে মিসিং ডায়েরি, প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা
এই সময় | ২৫ জুন ২০২৪
মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাত ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন আর্মি কোয়ার্টারের এক সিকিউরিটি গার্ড। ক্লাইভ রো-র কাছে হঠাৎ পিছন থেকে দুই বাইক আরোহী যুবক তাঁর মোবাইল ছিনিয়ে চম্পট দেয়। এই ঘটনার পরে হেস্টিংস থানায় চুরির অভিযোগ জানাতে গিয়ে ওই ব্যক্তি অবাক হয়ে যান। গার্ডের দাবি, থানার অফিসারেরা আগে মোবাইলের বিল এবং বক্স দেখাতে হবে বলে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।সেগুলো নিয়ে এলে একটি জিডি ফর্ম হাতে ধরিয়ে মোবাইল মিসিং-এর ডায়েরি করতে বলা হয়। শহরের বেশ কয়েকটি থানায় মোবাইল চুরির অভিযোগ জানাতে গিয়ে একই রকমের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন অনেকেই। আইনজ্ঞদের প্রশ্ন, ‘মোবাইল ছিনতাই বা চুরি হলে, মিসিং ডায়েরির বদলে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা উচিত।’
যদিও পুলিশকর্তাদের যুক্তি, ‘কী ঘটনা ঘটেছে, তা আগে খতিয়ে দেখা হয়। এর পর, মামলার গুরুত্ব বুঝে এফআইআর করা হয়ে থাকে।’
সম্প্রতি খিদিরপুর এলাকায় পদ্মপুকুরের কাছে ভোর বেলায় মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ২২ জুন ক্লাইভ রো-তে ছিনতাইবাজদের খপ্পরে পড়েন ভূ-কৈলাশ রোডের ওই বাসিন্দা।
অভিযোগ, বেহালা থেকে চিৎপুর, বেলেঘাটা থেকে বাঁশদ্রোণী সর্বত্র এধরনের চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। যদিও সব ক্ষেত্রে যে বাইকে করে মোবাইল ছিনতাই হচ্ছে, তা নয়। কখনও বাসে, আবার কখনও মেট্রোয় যাতায়াতের সময়েও মোবাইল গায়েব হয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মোবাইলে ব্যক্তিগত তথ্য-ছবি স্টোর করা থাকে। সেইসব ডকুমেন্ট দুষ্কৃতীদের হাতে চলে গেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তা মিসইউজ হতে পারে। এমনকী, আর্থিক ক্ষতিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
আইনজ্ঞদের বক্তব্য, ‘চুরি বা ছিনতাইয়ে অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করতে পারে পুলিশ। দোষী প্রমাণিত হলে তিনবছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে। তদন্তের শেষে আদালতে চার্জশিট অথবা ডিসচার্জ রিপোর্ট পেশ করতেই হয় পুলিশকে।’
আইনজীবী সেলিম রহমানের কথায়, ‘এই ধরনের জিডি লেখা হলে, তা আর কগনিজেবল অফেন্স থাকে না। প্রতিটি থানাকে কোন এলাকায়, কোন ধারায় মামলা হচ্ছে, তার হিসেব দিতে হয়। একজন এসআই-কে তদন্তের জন্য নিয়োগ করতে হয়। এর পর প্রয়োজন হয় সাক্ষীর বয়ান। জিজ্ঞাসাবাদের পরে ফাইনাল রিপোর্ট জমাও দিতে হয়। এফআইআর না হলে, এ সব হ্যাপার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না পুলিশকে।’
কলকাতা বন্দর এলাকায় পর পর এরকম কয়েকটি অভিযোগ ওঠায় ডিসি (পোর্ট) হরিকৃষ্ণ পাই বলেন, ‘কেউ অভিযোগ জানাতে এলে জিডি করা হচ্ছে, তার মানে এই নয় যে চুরির অভিযোগে মামলা হচ্ছে না।’