স্বাস্থ্যসাথী-লিস্টে শনাক্ত, ১০ মাসে মামলা নিষ্পত্তি
এই সময় | ২৫ জুন ২০২৪
এই সময়, ঝাড়গ্রাম: ট্র্যাফিকিং-কাম-পকসো কেসে মাত্র ১০ মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি হলো ঝাড়গ্রামে। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বয়ংসিদ্ধা প্রকল্প চালু হওয়ার পরে ট্র্যাফিকিং কেসে রাজ্যে প্রথম এত দ্রুত মাত্র ১০ মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করা সম্ভব হলো। নাবালিকা এবং তার পরিবার বিচার পেল।’ মামলায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ছবি দেখে আড়কাঠিকে শনাক্ত করা হয়।প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে নারী পাচারকারীদের জালে জড়িয়ে পড়েছিল স্কুলছাত্রী। ওষুধ খাইয়ে বেহুঁশ করে প্রতিদিন নাবালিকাকে দেহ ব্যবসায় ব্যবহার করা হতো। টের পেয়ে সে ওই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতেই তাকে ভিনজেলায় পাচার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে না আসায় নাবালিকার মা ২০২৩ সালের ১৭ অগস্ট ঝাড়গ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগপত্রে কারও নাম উল্লেখ না থাকায় সমস্যায় পড়ে পুলিশ। প্রথমে অপহরণের ধারায় মামলা রুজু করা হয়। এর পরে পুলিশ নাবালিকাকে ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করে। আদালতে নাবালিকার গোপন জবানবন্দি পুরো ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। জড়িতদের শনাক্ত করতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডে থাকা মহিলাদের ছবি দেখানো হয়। অপহরণ, ধর্ষণ, নারী পাচারের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে পুলিশ চিহ্নিত করেছিল ওই নথির সাহায্যেই। কোনও ফৌজদারি মামলার তদন্তে এমন ঘটনা বিরল।
সোমবার ঝাড়গ্রামের পকসো আদালতের বিচারক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এক মহিলা-সহ চার জনকে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং আর্থিক জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলো, পিঙ্কি বিশাল ওরফে সোনালি, কৌশিক সিংহ ওরফে লাদেন, অজয় দাস ও বাবর বেগ। অপহরণের মামলার তদন্তে নেমে নারীপাচার চক্রের সন্ধান পেতেই ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহার নেতৃত্বে এই মামলায় বিশেষ ‘সিট’ গঠন করা হয়।
এসপি বলেন, ‘মেয়েটিকে উদ্ধার করার পর প্রথমে ওর প্রেমিক কৌশিক সিংহের কথা জানিয়েছিল। তারপর এক আন্টির কথা বললেও তার নাম বলতে পারেনি। সে জন্য আমরা স্বাস্থ্যদপ্তরের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হোল্ডারদের ছবি সমেত তালিকা চেয়ে পাঠাই। সেখান থেকে মেয়েটি নারী পাচারের মূল চক্রী পিঙ্কি বিশালকে শনাক্ত করে। তারপর পিঙ্কিকে গ্রেপ্তার করা হয়। অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিংয়ের ঘটনার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশ মতো সিট গঠন করা হয়েছিল। যাতে নাবালিকা মনে সাহস পায় সাক্ষ্য দিতে।’
গত ২৬ আগস্ট কৌশিক সিংহ ওরফে লাদেন, অজয় দাস ও বাবর বেগকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আদালতে চার্জশিট জমা করে পুলিশ। পুরুলিয়া থেকে গত ২৯ নভেম্বর পিঙ্কিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে ফের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা করে পুলিশ। সতেরো বছরের ওই কিশোরীকে পিঙ্কি বিশাল ওরফে সোনালি এই চক্রে জড়িয়ে ফেলেছিল।
নাবালিকা ছাত্রী পুলিশকে বলে, ‘পিঙ্কি আন্টি যুবক কৌশিক সিংহ এবং অজয় দাসকে দিয়ে প্রথমে মেয়েদেরকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। তারপর মেয়েদের ওর বাড়িতে নিয়ে এসে জোর করে বেহুঁশ করার ওষুধ খাইয়ে প্রতিদিন ধর্ষণ করত। ঘোর কাটলে ব্যথা অনুভব করতাম। বিষয়টি বুঝতে পেরেই ওই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতেই আমাকে ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে দেয়। ঘুম ভাঙতেই দেখি, মেদিনীপুরে একটি ঘরে রয়েছি। সেখানে এরকম আরও অনেক মেয়ে ছিল।’
বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি কুণালকান্তি ঘোষ বলেন, ‘পুলিশ অত্যন্ত দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দেয় আদালতে। মোট ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত। গত শুক্রবার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এ দিন বিচারক চার জনকে ২০ বছরের সাজা ঘোষণা করেছেন। প্রতিটি ধারায প্রমাণিত হয়েছে এবং প্রতিটি ধারায় আলাদা ভাবে সাজা ও জরিমানা ঘোষণা করেছেন বিচারক। জরিমানার টাকাও নাবালিকাকে দিতে হবে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে নাবালিকাকে তিন লক্ষ টাকা রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে এক মাসের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। গুরুত্বপূর্ণ মামলায় জেলা পুলিশের গঠন করা ‘সিট’-এর প্রশংসাও করেছেন বিচারক।’