প্রশ্ন হল: কেন এই হাল আর কেনই বা মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ এত খড়্গহস্ত হলেন?
পূর্ববঙ্গ থেকে আসা উদ্বাস্তু মানুষদের অন্যতম আশ্রয়স্থল নদিয়ার কুপার্স ক্যাম্প ১৯৯৭ সালে নোটিফায়েড এরিয়া হয়েছে। ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পুর এলাকায় ভোটারের সংখ্যা ২২ হাজারের কাছাকাছি। দীর্ঘদিন ধরে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপক প্রকল্প গড়ে ওঠার কথা থাকলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। পুরসভা সূত্রের দাবি, জমিজটের কারণেই ওই প্রকল্প গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
২০১৭ সালের অগস্টে শেষ বার এই পুরসভায় নির্বাচন হয়েছিল। তাতে তৃণমূল ১২টি ওয়ার্ডেই জয়ী হয়। বছর দুই আগে সেই পুরবোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও এখনও নির্বাচন হয়নি। সেই থেকেই রানাঘাটের মহকুমাশাসক এই পুরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কুপার্সের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কঠিন বর্জ্য প্রকল্প না থাকায় শহরের শ্মশানের কাছে সড়কের পাশে আবর্জনার স্তূপ এখন ছোটখাটো পাহাড়ের চেহারা নিয়েছে। গবাদি পশুর মৃতদেহ থেকে অব্যবহৃত সামগ্রী সবই ফেলা হচ্ছে সেখানে। তাতে এলাকার ফুল চাষের জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন না বাসিন্দারা। পূর্বতন বোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর 'পুরসভার নিজস্ব তহবিলের ভাঁড়ার শূন্য' এই যুক্তি দেখিয়ে জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজে যুক্ত প্রায় অস্থায়ী দেড়শো কর্মীকে বসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে নিয়মিত পরিষ্কার হয় না শহরের নিকাশি নালাও।
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশেরল ধারণা, শহরের বিস্তর সমস্যায় তিতিবিরক্ত হয়েই ভোটারদের একটা বড় অংশ তৃণমূলের থেকে মুখ ঘুরিয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও কুপার্স শহর থেকে ৭১২ ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু এ বারের লোকসভা নির্বাচনে ১৫৮০ ভোটের ব্যবধানে তারা বিজেপির চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। একমাত্র ৭ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ১০টি ওয়ার্ডেই লিড পেয়েছে বিজেপি। এই প্রবণতা যে বিপজ্জনক তা তৃণমূল নেত্রী বিলক্ষণ জানেন। ফলে তাঁর রোষের মুখে পড়েছেন প্রশাসক।
ফল খারাপ হওয়ার কারণে আগেই প্রশাসককে দায়ী করেছিলেন কুপার্স প্রাক্তন উপপুরপ্রধান তথা কুপার্স শহর তৃণমূলের সভাপতি দিলীপকুমার দাস। তাঁর দাবি, "উন্নয়নের কাজ থমকে রয়েছে। কিন্তু প্রশাসক হিসেবে মহকুমাশাসককে পাওয়া যায় না। শেষ কুড়ি মাসে পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের বেতন হয়নি। ভোটের ফলে তারই প্রভাব পড়েছে।"
তবে রানাঘাটের মহাকুমাশাসক রৌনক আগরওয়াল বলেন, "কুপার্সে জমি সমস্যার কারণেই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপক প্রকল্প গড়ে ওঠেনি।”
শো-কজ়ের চিঠি পেলে যথাবিহিত উত্তর দেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে জমি চিহ্নিত হয়েছে। গত কয়েক মাসে আদর্শ নির্বাচন বিধি বলবৎ থাকায় প্রকল্পের কাজ এগোয়নি। দু’একদিনের মধ্যেই নতুন করে পরিকল্পনা নিচ্ছি।"