• দিঘির জলে পড়েছিলেন মা, কয়েকশো বছর আগে প্রতিষ্ঠা হল মন্দির...
    ২৪ ঘন্টা | ২৫ জুন ২০২৪
  • জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষের বোয়াইচণ্ডী পুজো। রাঢ়বঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব। কেউ কেউ বলে বোঁয়াইচণ্ডী। আসলে বসন্তচন্ডী। তখনকার দিনে লোকবিশ্বাস ছিল, কলেরা, গুটি বসন্ত-সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ সারে এই মা বোয়াইচণ্ডী বা মা বোঁয়াইচন্ডীর কৃপায়।

    প্রতিবারের মতো এবারেও অম্বুবাচী তিথিতে মা বোঁয়াইচন্ডীর মন্দিরে ভিড় জমিয়েছেন ভক্তরা। এমনিতে সারা বছরই দেবীর মন্দির খোলা থাকে। আগে এই অঞ্চলে কলেরা কিংবা গুটি বসন্ত রোগ হলে  মন্দিরে পুজো দিয়ে সেই ফুল এবং ওষুধ রোগীকে  খাওয়ানো হত। বিশ্বাস, তাতেই সেরে উঠতেন রোগী! কলেরা কিংবা বসন্ত মহামারীর আকার ধারণ করলে মা বোয়াইচন্ডী রক্ষা করেন বলে বিশ্বাস করেন এলাকাবাসী। 

    অম্বুবাচী তিথিতে দেবীর বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। এবারেও হয়েছে। অম্বুবাচী তিথির তিন-চার দিন ধরে দূর দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত এসে হাজির হন বোঁয়াইচন্ডী মায়ের মন্দিরে। অনেকেরই মানসিক বা মানত থাকে। এরকম থাকলে মায়ের পুকুরে স্নান করে তা পূরণ করেন ভক্তরা।

    কথিত আছে, আজ থেকে ৫০০ বছর পূর্বে এই বোয়াইচণ্ডী দেবী পার্শ্ববর্তী গ্রামের দিঘির এক কোণে পড়ে ছিলেন। ওই ভাবে অনাদরে-অবহেলায় থাকার সময়ে বোঁয়াই গ্রামের এক ব্যক্তি, বুদ্ধমন্ত্র খাঁকে মা স্বপ্নাদেশ দেন, তিনি এই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। সেই স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর বোয়াইচন্ডী দেবীকে গ্রামে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইতিপূর্বে এই গ্রামের নাম ছিল বোঁয়াই। কিন্তু দেবী প্রতিষ্ঠার পর গ্রামের নাম হয় বোয়াইচন্ডী।

    আরোও কথিত আছে, বর্ধমানের রাজা নিঃসন্তান ছিলেন। সেই সময় মা চন্ডী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন, তাঁর ঘরে সন্তান আসবে। ইচ্ছেপূরণ হলে তিনি মায়ের মন্দির করে দেবেন, এমন মানসিকও করেন রাজা। যথাসময়ে সত্যিই মহারাজের ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক সন্তান। এরপর বর্ধমানের মহারাজা নিজের মানসিক পূরণ করতে বোঁয়াইচন্ডী দেবীর মন্দির নির্মাণ করে দেন। 

    এবারও প্রতিবারের মতো প্রচন্ড রোদ ও গরম উপেক্ষা করে বহু ভক্তের সমাগম ঘটেছে মন্দিরে। পুজো উপলক্ষে মেলাও বসেছে মন্দির প্রাঙ্গণে। প্রচুর দর্শনার্থীদের আগমনের কারণে বিক্রি-বাটাও ভালো হচ্ছে। আষাঢ় মাসের ৭,৮ ৯ এবং ১০ তারিখ-- এই চারদিন ধরে চলে মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করেই মেতে ওঠেন বোয়াইচণ্ডী-সহ আশেপাশের বহু গ্রামের বাসিন্দারা। 

    এই গ্রামে প্রায় একশো ঘর দেবীর সেবায়েত আছেন। তাঁদের দাবি, এবার দর্শনার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম  জানান, আগামী দিনে ওই মন্দির চত্বর ঢেলে সাজানো হবে। মহিলাদের জন্য কমিউনিটি হলের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে খুব তাড়াতাড়ি।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)