ভোট থেকে শিক্ষা নিয়ে শুদ্ধিকরণের সিদ্ধান্ত আলিমুদ্দিনের, শাস্তির মুখে পড়বেন ‘নিষ্ক্রিয়’ সদস্যরা!
প্রতিদিন | ২৫ জুন ২০২৪
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: চব্বিশের লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর দলে শুদ্ধিকরণের পথে হাঁটতে চলেছে আলিমুদ্দিন। নির্বাচনী লড়াইয়ে যে সব পার্টি সদস্য সংগঠনের কাজে সঠিক ভূমিকা পালন করেনি তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে বঙ্গ সিপিএম।
প্রাথমিক পর্যালোচনার খসড়া রিপোর্ট প্রকাশ করে সেখানে জেলা কমিটিগুলিকে আলিমুদ্দিনের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘নির্বাচনী সংগ্রামে যে সমস্ত পার্টি সদস্য, যে স্তরেরই হোক না কেন যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করেননি, জেলা কমিটিগুলিকে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ অর্থাৎ যত বড়ই নেতা বা যে কমিটির সদস্যই হোন না কেন, ভোটের কাজে সঠিক ভূমিকা যাঁরা পালন করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নিতে চলেছে রাজ্য কমিটি। শুধু তাই নয়, পার্টি অফিসে বসে যাঁরা নেতাগিরি করেন, এলাকায় যান না, সেই সমস্ত নেতাদের সতর্ক করে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ, ‘পার্টি সদস্যদের একটা ভাল সময় জনগণের অভ্যন্তরে যেতে হবে। শুধুমাত্র পার্টি দপ্তরের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে এলাকায় জনগণের মধ্যে সময় ব্যয় করতে হবে।’
রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে, পার্টি সদস্য ও এজি সদস্যের বড় অংশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা ছিল নির্বাচনের কাজে। একাংশ যান্ত্রিকভাবে কাজে অংশ নিয়েছেন। একের পর এক ভোট-যুদ্ধে পরাজয়ের পর হতাশা গ্রাস করেছে গোটা সিপিএম পার্টিকেই। গোড়ায় গলদ কোথায়, খুঁজতে নেমে পড়েছে আলিমুদ্দিন। আর সেই প্রক্রিয়া শুরুতেই নির্বাচনে দলের কাজে যারা সঠিক ভূমিকা পালন করেনি সেইসব পার্টি সদস্য বা নেতাদের উপর এবার খাঁড়া নামতে চলেছে দলীয় স্তরে। জেলা নেতাদের পাঠানো খসড়া রিপোর্টের ৯ নম্বর পাতায় আশু কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ মাসের মধ্যে জেলা কমিটিগুলিকে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা চূড়ান্ত করতে হবে। বিধানসভাভিত্তিক ফলের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই পর্যালোচনা করতে হবে। জনগণের সঙ্গে গুরুতর বিচ্ছিন্নতায় রয়েছে পার্টি। এটা বিবেচনায় রেখে পর্যালোচনায় জনগণের চাহিদা ও মনোভাব নিয়ে আলোচনা করতে হবে। জনগণ কোন বিবেচনায় রায় দিয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে জেলার নেতাদের। এই প্রসঙ্গেই আবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হারের পর্যালোচনা করতে গিয়ে শাখা, জেলা ও এরিয়া কমিটির ভূমিকাও দেখতে হবে। শাখা সদস্য ও এজি সদস্যদের ভূমিকা কী ছিল সেদিকেও নজর দিতে হবে। আর রাজ্য কমিটির সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে রাজ্য কমিটি পর্যালোচনা করবে।
এছাড়াও, এখন থেকেই প্রতিটি বুথে সংগঠন গড়ে তোলা, এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করে তার ভিত্তিতে জনগণকে শামিল করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এদিকে, খসড়া রিপোর্টে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই তৃণমূল বিরোধিতায় যত জোর পড়েছে বিজেপি বিরোধিতায় সেভাবে জোর পড়েনি। প্রচারে বহুক্ষেত্রে শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গির অনুপস্থিতি ছিল। আর প্রচারের কৌশলেও ভুল স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে রাজ্য সিপিএমের এই খসড়া রিপোর্টে। বলা হয়েছে, বাইরের প্রচারের দিকে জোর পড়েছে। কিন্তু বাড়ি বাড়ি যোগাযোগে ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। এছাড়াও পার্টির মধ্যে ঐক্যের সমস্যাও ছিল বলে মেনে নেওয়া হয়েছে।