শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: দুই পরিবারে মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ। ফেসবুকে হুমকি দেওয়া নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে তীব্র বচসা বাঁধে। বচসার জেরে মারধরের ঘটনায় মৃত্যু হল এক যুবকের। এ ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও তিনজন। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানার কাঁকুড়িয়া হোগলাবাড়ি গ্রামে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম সুরজ শেখ(২১)। মৃতের পরিবার তৃণমূল সমর্থক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে সামশেরগঞ্জে। যদিও কংগ্রেসের দাবি, এ ঘটনায় কোনও রাজনৈতিক যোগসূত্র নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকুড়িয়া হোগলাবাড়ির বাসিন্দা তবজুল শেখের সঙ্গে গ্রামের সেন্টু শেখ, ইসমাইল শেখ-সহ আরও কয়েকজনের মধ্যে গ্রাম্যবিবাদ চলছিল। মঙ্গলবার দুপুরে তবজুলের ছেলে সুরজ শেখ স্থানীয় একটি মসজিদে নমাজ পড়ে এসে বাড়িতে বিশ্রাম করছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে ঝন্টু শেখ , ইসমাইল শেখ, শিশু শেখের নেতৃত্বে কয়েকজন দুষ্কৃতী সুরজের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়। লোহার রড ও ইট দিয়ে বেধরড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠে। হামলার সময় পরিবারের সদস্যরা বাঁচাতে ছুটে এলে তাঁদের উপরও হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় সুরজের পরিবারের আরও তিনজন আহত হয়েছেন। তাঁরা অনুপনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় সুরজের। মৃত যুবক ও হামলাকারীরা সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিনরাজ্যে কাজ করেন। ইদের জন্য সম্প্রতি তাঁরা নিজেদের গ্রামে ফিরেছিলেন। শিশু শেখ ফেসবুকে গ্রামের কয়েকজনকে চ্যালেঞ্জ করে লেখেন, “তারা দলে চারজন আছে, বাকিরা দলে দশজন রয়েছে। মাঠের মধ্যে লড়াই করে দেখা যাবে কার ক্ষমতা বেশি রয়েছে।” গ্রামবাসীদের দাবি অল্পবয়সী যুবকরা নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। তারই পরিণামে এই মৃত্যু।
সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন,”মৃত সুরজ শেখ ও তাঁর পরিবার তৃণমূল সমর্থক। গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে সক্রিয়ভাবে এলাকায় কাজ করে ছিল। সেই আক্রোশে কংগ্রেসের দুষ্কৃতকারীরা তাঁকে খুন করেছে।” যদিও এই দাবি মানতে নারাজ সামশেরগঞ্জ ব্লক কংগ্রেসের সহ-সভাপতি সামসুল আলম বলেন,”এটি কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে খুন নয়। সমাজমাধ্যমে একটি হুমকি পোস্টকে ঘিরে গ্রাম্যবিবাদের জেরে খুন হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
এ প্রসঙ্গে জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার আনন্দ রায় জানান, “প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি ফেসবুকে পোস্টকে ঘিরে গ্রামে কয়েকজন যুবকের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে পাথরের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। জখম হয়েছেন আরও তিনজন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতজনকে আটক করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠান হয়েছে। এদিকে এই ঘটনার জেরে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা থাকায় গ্রামে চলছে পুলিশি টহলদারি।