এই সময়: নিটে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় এ বার নাম জড়িয়ে গেল কলকাতারও! অভিযোগ, শেক্সপিয়র সরণির একটি নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তরফে টাকার বিনিময়ে নিট-এর মেধাতালিকায় নাম তোলা এবং কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এক ছাত্রীকে। কিন্তু, মেধাতালিকা প্রকাশের পরে তাঁর নাম উঠেনি। এমনকী, টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি।এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির জন্য ওই সংস্থার সঙ্গে ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে বারো লাখ টাকার চুক্তি হয় বলে পুলিশ জানতে পারে। এরমধ্যে ওই ছাত্রীর বাবা পাঁচ লক্ষ টাকা অ্যাডভান্সও দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সৌরীশ ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, প্রতারণা সহ ষড়যন্ত্রেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই নিট-প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় তদন্তে নেমেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, নালন্দার বাসিন্দা সঞ্জীব মুখিয়া, ওরফে লুটন কুমারই নাটের গুরু। তাঁকে খুঁজছে সিবিআই। জানা যাচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁসই নাকি তাঁর পারিবারিক ব্যবসা। সরকারি চাকরি ছেড়ে, ভাইপো আর ডাক্তার ছেলেকে দলে ভিড়িয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন অসাধু উপায়ে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়াই তাঁর পেশা।
ফেরার ওই প্রৌঢ়ই বিহার-ঝাড়খণ্ডে নিটের প্রশ্ন ফাঁস করে ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। একাধিক শাগরেদ পুলিশের জালে উঠে এলেও মুখিয়া নিজেই এখনও ফেরার। পুলিশের সন্দেহ, নেপালেও পালাতে পারেন এই পরীক্ষা-মাফিয়া। ৩২ লক্ষ টাকায় তিনি নয়ডা থেকে ধৃত রবি অত্রি অথবা জনৈক কোনও প্রফেসরের থেকে নিটের প্রশ্ন কিনে ৪০ লক্ষ টাকায় এজেন্টদের এবং ৬৬ লক্ষ টাকায় সরাসরি নিট পরীক্ষার্থীদের বেচে দিয়েছেন বলে ধৃতরা পুলিশি জেরায় জানিয়েছেন। প্রশ্নগুলি মিলেছিল মোবাইলে পিডিএফ ফাইল হিসেবে।
বিহার পুলিশের এক কর্তা জানান, দিন তিনেক আগেই দেওঘরের দেবীপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া নালন্দার ছ’জনের মধ্যে পাঁচ জনই সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এবং সঞ্জীবের হয়ে তারা ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন বিক্রি করতেন। সঞ্জীব একদিকে অর্থবান, অন্য দিকে তাঁর রাজনৈতিক যোগাযোগও মন্দ নয়। সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানও হয়েছিল। গত বিধানসভা ভোটে এলজেপি-র টিকিটে হরনৌত কেন্দ্র থেকে ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী মমতা কুমারী। যদিও হেরে যান।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ‘সলভার গ্যাং’-এর অন্যতম চক্রী সঞ্জীব একসময়ে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করতেন নালন্দার নূরসরাই হর্টিকালচার কলেজে। ২০১৬-তে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষায় ও ২০২৩-এ বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীন শিক্ষক নিয়োগের মামলায় তিনি ছিলেন প্রশ্ন ফাঁসের মূল চক্রী। শিক্ষক নিয়োগের মামলায় জেলও খেটেছিলেন এক সময়ে। তাঁর ছেলে, পাটনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা শিবকুমারও সেই প্রশ্ন ফাঁসের মামলাতেই এখন জেলে।
পুলিশ জানাচ্ছে, সঞ্জীবের ভাইপো রকিও ফেরার। রাঁচিতে তার হোটেল ব্যবসা রয়েছে। নিটের প্রশ্ন ফাঁসের পর যে উত্তরপত্র তৈরি করে পাটনার প্লে অ্যান্ড লার্ন স্কুলের বয়েজ় হোস্টেলে ২৫ জন পরীক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তা রকিরই কারবার। ওই সব পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ধৃত অনুরাগ যাদবও ছিলেন। যিনি কোটায় নিটের প্রস্তুতি নিতে নিতেই পিসেমশাই, দানাপুর পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার সিকন্দর যাদবেন্দুর কথায় পাটনায় ফিরে আসেন।
সিকন্দর তাঁকে ৪০ লক্ষ টাকায় প্রশ্ন কিনে দেন সঞ্জীব মুখিয়ার কাছ থেকে। আর সেই প্রশ্নের প্রতিলিপিই আবার ৬৬ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হয় অন্যান্য পরীক্ষার্থীকে। এদের সকলেই এখন পুলিশের জালে। প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি কলকাতাতেও নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। সৌরীশ গ্রেপ্তার হওয়ার পরে কলকাতার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এবার গোয়েন্দাদের স্ক্যানারে চলে এলো।