• স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সূত্রে পাচারকারীর হদিস, তদন্তে সাফল্য, ১০ মাসেই নিষ্পত্তি
    হিন্দুস্তান টাইমস | ২৬ জুন ২০২৪
  • একটি অপহরণ, নারী পাচার ও ধর্ষণের মামলায় নজিরবিহীনভাবে তদন্ত করে সাফল্য পেল পুলিশ। তদন্তকারীদের তৎপরতায় দ্রুততার সঙ্গে মামলার নিষ্পত্তি করে দিল আদালত। এক নাবিকাকে অপহরণ করে পাচারের চেষ্টা করেছিল নারী পাচারকারীরা। সেই সময় পুলিশ তদন্তে নাবালিকাকে কোনওভাবে উদ্ধার করলেও পাচার চক্রের মূল পান্ডার পরিচয় জানতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সহায়তায় পাচার চক্রের মাথাকে শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করে তদন্তকারীরা। মাত্র ১০ মাসেই এই মামলার নিষ্পত্তি হল আদালতে। আইনজীবী মহলের বক্তব্য, পাচারের ক্ষেত্রে রাজ্যে এটিই প্রথম দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া মামলা। ঘটনাটি ঝাড়গ্রামের।


    জানা যাচ্ছে, নাবালিকা একজন স্কুল ছাত্রী। প্রথমে পাচারকারীদের একজন স্কুল ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে ফেলে। এরপর বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে অন্যত্র নিয়ে যায়। সেখানেই ওষুধ খাইয়ে বেহুশ করে নাবালিকাকে লাগাতার ধর্ষণ করা হয়। শুধু তাই নয়, একটি ঘরে বন্দি করে রেখে তাকে পাচারের চেষ্টাও চালায় পাচারকারীরা। ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছরের ১৭ অগস্ট। এদিকে, মেয়ে স্কুল থেকে বাড়ি না ফেরায় রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়ে নাবালিকার পরিবার। ঘটনায় তারা ঝাড়গ্রাম থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও সেই অভিযোগপত্রে অপহরণকারী বা অন্য কারও নাম জানাতে পারেননি নাবালিকার বাবা মা। তাতে তদন্তে সমস্যায় পড়েন তদন্তকারীরা। 

    এরপর পুলিশ তল্লাশি অভিযান চালিয়ে নাবালিকাকে ঝাড়গ্রাম রেলস্টেশন সংলগ্ন একটি এলাকা থেকে উদ্ধার করে। পরে নাবালিকা আদালতে গোপন জবানবন্দি  দেয়। এদিকে, নাবালিকা পুলিশের কাছে পাচারকারীদের মধ্যে শুধু একজনের নামই বলতে পেরেছিল। সেটা হল তার প্রেমিক কৌশিক সিংহ। কিন্তু, বাকি কারও নাম সে বলতে পারেনি। নাবালিকার কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে যে এই চক্রের মূল পান্ডা ছিল একজন মহিলা, যাকে পাচারকারীরা সকলেই আন্টি বলে ডাকত। কিন্তু, নাবালিকা মহিলার নাম বলতে না পারায় তদন্তে সমস্যায় পরে পুলিশ। এরপর ওই মহিলার হদিস পেতে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সাহায্য নেয় পুলিশ। 

    ঝাড়গ্রামে পুলিশ সুপার অভিজিৎ সিনহা জানান, মামলায় তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ছবি এবং তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়। এরপর নাবালিকাকে ছবি দেখিয়ে ওই মহিলাকে শনাক্ত করে পুলিশ, যার নাম ছিল পিঙ্কি বিশাল। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশ মতো সিট গঠন করা হয়েছিল। প্রথমে কৌশিক সিংহ, অজয় দাস ও আরও একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পুরুলিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয় পিঙ্কিকে। পুলিশ জানতে পারে, ওই পিঙ্কি যুবকদের দিয়ে প্রথমে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলতো। এরপর তাদের বাড়িতে নিয়ে এসে বেহুঁশ করে ধর্ষণ ও পরে পাচার করা হত। 

    এই মামলায় মোট ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত। গত শুক্রবার চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক। আর পরে চারজনকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে নাবালিকাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে এক মাসের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পাশাপাশি তিনি পুলিশের তদন্তের প্রশংসা করেছেন।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)