গাঁয়ের ছেলে হারেজ শেখ জঙ্গিযোগে ধরা পড়ার খবরে বিস্ময়ে হতবাক গোটা মোল্লা পাড়া। গ্রামের পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সকলের একই বুলি, ‘হারেজ তো পাগলা। ও কী করে জঙ্গি হবে?’
নবদ্বীপ ব্লকের মায়াপুর-বামুনপুকুর-১ পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম মোল্লাপাড়ার মাঝের পাড়ার তস্য গলির মধ্যে হারেজ শেখের বাড়ির সামনে মঙ্গলবার বিকেল থেকে থিকথিকে ভিড়। আশপাশের বাড়ির বারান্দা, ছাদ উপচে পড়ছে মহিলাদের ভিড়ে। সকলেই ততক্ষণে জেনেছেন জঙ্গিযোগে তাঁদের পাশের বাড়ির ছেলে মঙ্গলবার সকালে হাওড়া স্টেশন এলাকা থেকে ধরা পড়েছে। প্রসঙ্গত, গত শনিবার কাঁকসা থেকে জঙ্গি সন্দেহে ধৃত মহম্মদ হবিবুল্লাকে জেরা করে নদিয়ার মায়াপুরের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা হারেজ শেখের কথা জানতে পারে এসটিএফ।
মোল্লাপাড়ার মাঝেরপাড়ায় হাফিজা বিবি এবং দুই ছেলে হারেজ এবং মারেজকে ফেলে চলে যান স্বামী সিরাজ শেখ। সেটা ২০০০ সাল। হাফিজা বিবি সেই থেকে বাবা হায়দার শেখের আশ্রয়ে। দুই ছেলে মামার বাড়িতে মানুষ। মামাদের দেওয়া জায়গায় আবাস যোজনার ছোট্ট ঘরে মাকে নিয়ে থাকে হারেজ। ছোটভাই কল্যাণীতে থেকে পড়াশোনা করে। স্থানীয় বামনপুকুর হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর অসুস্থতার কারণে হারেজ লেখাপড়া ছেড়ে দেয় বলে পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে। ছোটমামা শফিকুল শেখ বলেন, “ছোট থেকেই ওর কান দিয়ে পুঁজ বের হত। লকডাউনের আগে কানের সমস্যা মারাত্মক আকার নেয়। মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওর মাথায় দুটো বড় অপারেশন হয় এক বছর অন্তর। ডাক্তারবাবুরা বলেছিলেন এই অপারেশনের পর স্বাভাবিক হতে অনেক বছর লাগবে। সেই থেকে ও পাগল।” জঙ্গিযোগের কথায় তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “আমার ভাগ্নে যে ভারসাম্যহীন এটা গ্রামের সকলে জানে। কোনওদিন কোথাও যায়নি। ও কী করে এসব কাজে যুক্ত হবে?” মা হাফিজা বিবির কথাবার্তাও কিছুটা অসংলগ্ন।
সারাদিন কী করত হারেজ? জবাবে দাদু হায়দার শেখ বলেন, ‘‘সারাদিনের কাজ বলতে নিয়ম করে নমাজ পড়তে যাওয়া আর বাড়ির গরু-ছাগল দেখাশুনো করা। আর কাজ না থাকলে শুধু ঘুমানো। জীবনে কোনওদিন পাড়ার বাইরে যায়নি। ভাল করে কথাই বলতে পারে না। ও পাগল।” তাহলে হাওড়ায় পৌঁছলো কী করে? উত্তরে মামা শফিকুল বলেন, “সোমবার সকালে ও বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। আমি জিজ্ঞেস করায় বলেছিল তার পরিচিত একজন বলেছে হাওড়ার গেঞ্জি কারখানায় কাজ দেবে। একবার গিয়ে দেখি কী ব্যাপার, তারপর বলব। তারপর আজ সকালে প্রথমে পুলিশ তারপর আপনাদের কাছে জানতে পারছি ওকে এসটিএফ ধরেছে। কিছুই বুঝতে পারছি না।”
দোকানদার থেকে প্রতিবেশী সকলেই এক বাক্যে জানাচ্ছেন, তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছেন না, হারেজের সঙ্গে জঙ্গি যোগ থাকতে পারে। পড়শি সুকুর আলির কথায়, ‘‘ও তো গুছিয়ে কথাই বলতে পারে না। আমরা চেনা লোক ডাকলেও সাড়া দেয় না। নমাজ পড়তে পড়তে মাঝপথে চলে গেল। এমন মানুষের জঙ্গি যোগ, খুবই অবাস্তব মনে হচ্ছে।”