মঙ্গলবার ভাঙড় কলেজ মাঠে তৃণমূলের সভা ছিল। সেখান থেকে আরাবুলের নাম নিয়েই একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন শওকত। তৃণমূল বিধায়ক শওকতকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ভাঙড়ের দায়িত্ব দেয় তৃণমূল। ঘাসফুল শিবিরের অন্দরের খবর, তখন থেকে আরাবুল এবং শওকতের ঠান্ডা যুদ্ধ চলছিল। তবে এ ভাবে প্রকাশ্যে এক জন অন্য জনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, সেটা এই প্রথম। তৃণমূল বিধায়ক শওকতের দাবি, দিন দুয়েক আগে তিনি একটি চিঠি পান। তাতে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার একটি হিসাব পেয়েছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট দেওয়ার নাম করে কারও কাছ থেকে ৬ লক্ষ, তো কারও কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তোলা হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান করার জন্য ২৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। আর এ সবের মূলে ছিলেন আরাবুল। শওকতের কথায়, ‘‘আমি তো ভাঙড়ের এই ভৌগোলিক অবস্থানের কথা আগে জানতাম না। সবে এক মাস এসেছি, কী করে বুঝব! নিজের ছেলেকে পোলেরহাট থেকে তুলে এনে জেলা পরিষদে টিকিট দিতে হবে বলে আমার কাছে এসেছে। দিয়েছি। তখনও জানতাম না কী চলছে। ওকে কনভেনার পর্যন্ত করা হয়েছে। সভাপতিও করা হয়েছে। একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি। ভাঙড়ে কোনও নেতৃত্ব এলে বলেছি, আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করেছি। কারণ, এখানে আইএসএফের বিরুদ্ধে লড়তে হলে আমরা এক হয়েই কাজ করব। এ-ও বলেছি, আরাবুলের প্রতি যা আছে থাক। একসঙ্গে সবাই লড়াই করব।’’
শওকত এ-ও বলেন, ‘‘দলের সঙ্গে গাদ্দারি করেছেন। যাঁকে ভাঙড়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম, সেই আরাবুল ইসলামের নামে কয়েকটা চিঠি হাতে পেয়েছি।’’ জেলা পরিষদের সদস্য খাদিজা বিবির হয়েও তাঁর কাছে আরাবুল দরবার করেছিলেন বলে দাবি শওকতের। তিনি বলেন, ‘‘তাঁকেও উনি যেখানে দাঁড় করাতে বলেছেন, সেখানেই আমি দাঁড় করিয়েছি। সেই খাদিজা বিবিও লোকসভা ভোটে গদ্দারি করেছেন। তাঁকে দলের আর কোনও মিটিং-মিছিলে ডাকা হবে না। প্রশাসনিক সহযোগিতাও যাতে না-পান, সেটাও দেখা হবে।’’
এখানেই শেষ নয়। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন শওকত। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। খুন হয়েছেন। আমি চেষ্টা করেছি, ওই সব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মাঝখানে খইরুলকে মার্ডার করতে হবে বলে পরিকল্পনা শুরু হয়। তখন আমরা কিছুই জানি না।’’ তৃণমূল বিধায়কের দাবি, তিনি এই তথ্য পেয়েছেন খোদ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের কাছ থেকে। শওকত বলেন, ‘‘এক দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বললেন, ‘খুব ভাঙড়ে নেতাগিরি করছ। ওখানে এক জন পঞ্চায়েত প্রধান আছেন, তাঁর স্বামীর নাম খইরুল ইসলাম। তাঁকে মার্ডার করার জন্য ১৮ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে। তুমি যে আরাবুল-আরাবুল করো, সেই আরাবুলই এই ঘটনার মূল নায়ক। ওটা আমার উপর ছেড়ে দাও।’ এই ঘটনা শোনার পর আমি একটি কাজে দিল্লি যাই। তখনই আরাবুল গ্রেফতার হয়েছেন।’’ এ ছাড়াও বিভিন্ন অসামাজিক কাজের সঙ্গে আরাবুল যুক্ত হয়ে ভাঙড়ে তৃণমূলকে শেষ করে দিয়েছেন বলে সভা থেকে ক্ষোভ উগরে দেন শওকত। তিনি জানান, আরও অনেক তথ্য পেয়েছেন। সে সবেরই তদন্ত হবে দলের তরফে।
তাঁর বাবার বিষয়ে দলের বিধায়কের এ রকম অভিযোগ নিয়ে আরাবুলের ছেলে হাকিমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তৃণমূলের যুব নেতা বলেন, ‘‘আমার কাছে এর উত্তর নেই। এ বিষয়ে কিছু বলার নেই।’’