সোমবার প্রশাসনিক বৈঠকে সুজিতের নাম করে প্রকাশ্যেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি, তিনি সরাসরি সুজিতের বিরুদ্ধে সরকারি জায়গায় লোক বসানোর অভিযোগও তুলেছেন। যা নিয়ে বিধাননগরে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিধাননগরে সরকারি জমি তো এক দিনে দখল হয়ে যায়নি, পুকুর-জলাও রাতারাতি এক দিনে ভরাট হয়নি। তা হলে কেন আচমকা লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের পরপরই সুজিতের উপরে চটলেন তৃণমূল নেত্রী?
এ বারের লোকসভা ভোটে শহর বিধাননগরে ডাহা হেরেছে তৃণমূল। এমনকি, বিধাননগর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন, সুজিতের খাসতালুক লেক টাউনেও তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের খবর, এই খারাপ ফল নিয়েই ক্ষুব্ধ মমতা।
ভিআইপি রোডের দক্ষিণদাঁড়ি, গোলাঘাটা অঞ্চলে একটু ঘুরলেই চোখে পড়বে, কী ভাবে সরকারি জায়গায় তৈরি হয়েছে বিভিন্ন আবাসন এবং রেস্তরাঁয় যাতায়াতের পথ। ওই সমস্ত পথের নীচে এক সময়ে নয়ানজুলি ছিল। দক্ষিণ দমদমে বরাবর সুজিতের বিরোধী শিবিরের নেতা বলে পরিচিত, বিজেপি নেতা মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘আমি সেই সময়ে তৃণমূলে ছিলাম। নয়ানজুলি ভরাট নিয়ে যখন বিতর্ক চলছে, তখন রাজ্য সরকারের তরফে কোনও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। উল্টে একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে যখন জাতীয় পরিবেশ আদালত পূর্ত দফতরকে নির্দেশ দেয় নয়ানজুলি পুনরুদ্ধার করতে, তখন সরকার সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিলে গিয়েছিল। পরে সুজিতবাবু মন্ত্রীও হয়ে যান।’’
কান পাতলে এমন অভিযোগও শোনা যায়, সামগ্রিক ভাবে লেক টাউন অঞ্চলে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন সুজিতের অনুগামীরাই। লোকসভা নির্বাচনের আগে সল্টলেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রার যাবতীয় আয়োজনের পুরোভাগে ছিলেন সুজিত। তাঁকে পাশে নিয়েই পদযাত্রায় হেঁটেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ফুটপাত দখল হওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশের পরে মঙ্গলবার সল্টলেকে ১৬ নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে ফুটপাতের বেশ কিছু দোকান ভেঙে দিয়েছে বিধাননগর পুরসভা। সরকারি জায়গা দখলের প্রশ্ন উঠলে দেখা যায়, গোটা সল্টলেক জুড়ে নগরোন্নয়ন দফতরের একাধিক জমিতে বস্তি গজিয়ে উঠেছে। সরকারি রাস্তায় চলা পার্কিংয়ের ব্যবসার অনেকগুলি বৈধ নয় বলেও অভিযোগ। এমনকি, সুজিতের অনুগামী এক পুরপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত জমি দখল করে ক্লাব তৈরির অভিযোগ উঠেছে। যা ভাঙার ক্ষেত্রে কলকাতা হাই কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। তবে সে সব নিয়ে এত দিন হেলদোল দেখা যায়নি রাজ্য প্রশাসনের। বিধাননগরের নাওভাঙা, কুলিপাড়া, ছয়নাভির মতো জলাভূমি অধ্যুষিত সংযুক্ত এলাকায় জবরদখল নিয়ে বহু দিন ধরে চর্চা চলছে। ৩০০ বেআইনি বাড়ির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিধাননগর পুরসভা।
পরিষেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তোপ দাগার পরে এ দিন বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী কার্যত ব্যর্থতার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দিদি যখন বলেছেন, নিশ্চয়ই আমাদের কাজে খামতি রয়েছে। আমরা শুধরে নেব।’’
এ নিয়ে সুজিতের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি এসএমএসেরও উত্তর দেননি।