জেলে বসেই PhD-এর আবেদন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউতে মাওবাদী নেতা
প্রতিদিন | ২৬ জুন ২০২৪
অর্ক দে, বর্ধমান: জেলে বসেই উচ্চশিক্ষা! পিএইচডি করতে চান হুগলির সংশোধনাগারের এক বন্দি। পিএইচডি করতে চেয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলেন রাজ্যের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা। বুধবার তাঁর ইন্টারভিউ হল গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের ইতিহাস বিভাগে।
জেল থেকে পরীক্ষা দিয়েই স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট(সেট)-এ সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন রাজ্যের শীর্ষ মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। রাজ্য কারাদপ্তর সূত্রে খবর, এর আগে কেউ জেলবন্দি অবস্থায় এ ধরনের কোনও পরীক্ষায় সফল হননি। এবার সেই অর্ণব পিএইচডি করতে চান। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি।
গড়িয়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এসকে দামের ছেলে অর্ণব ছোট থেকেই মেধাবী। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে খড়্গপুর আইআইটি-তে পড়াশোনা করেন। কিন্তু তিনটি সেমেস্টারের পরই হঠাৎই ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। সিপিআই (মাওবাদী)-এর রাজনৈতিক মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে ১৯৯৮ সালে অর্ণব যোগ দিয়েছিলেন ওই সংগঠনে। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত মাওবাদী পলিটব্যুরো নেতা কিষেনজির অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন। লালগড় আন্দোলনের সময় অযোধ্যা-বাঘমুন্ডির পাহাড়-জঙ্গলে তাঁর গেরিলা বাহিনী নাজেহাল করে দিয়েছিল যৌথবাহিনীকে। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা থেকে শুরু করে একাধিক মাওবাদী হামলায় অভিযুক্ত অর্ণব ২০১২ সালে হঠাৎই ধরা পড়েন আসানসোল থেকে। জেলবন্দি হওয়ার পর থেকেই ওই গেরিলা নেতা অসম্পূর্ণ থাকা উচ্চশিক্ষায় মন দেন।
জেল থেকেই পরীক্ষা দিয়ে স্নাতক হন। প্রায় ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে শেষ করেন স্নাতকোত্তর পাঠ। ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট(নেট)-এ বসার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তিনি সেই পরীক্ষা দিতে পারেননি। প্রায় ৪০ বছর বয়সী প্রাক্তন মাওবাদী নেতা সেট পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন জানান। জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে সেই পরীক্ষা তিনি দেন। সেটে পাশ করার পর এবার পিএইচডি করা লক্ষ্য তাঁর। এদিন তার প্রথম ধাপ পূর্ণ করলেন।
এ প্রসঙ্গে ইতিহাস বিভাগে বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তানভির নাসরিন বলেন, “এটা ইতিবাচক দিক। উনি সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে চাইছেন, এটা খুব ভালো। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে উনি আবেদন করেন। আবেদনে দেখা গিয়েছে, উনি সবদিক থেকে যোগ্য। ইন্টারভিউ হয়েছে।” যদি অর্ণব দাম নির্বাচিত হন. তবে কীভাবে তিনি কোর্স শেষ করবেন, তা বিশ্ববিদ্যালয় ও জেল কর্তৃপক্ষ বৈঠকে ঠিক করবেন।